হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে ৪১তম আগরতলা বইমেলা সমাপ্ত

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে বইমেলা : বিধানসভার অধ্যক্ষ
৪১তম আগরতলা বইমেলার আজ সমাপ্তি অনুষ্ঠান৷ তাই মেলার সর্বত্রই একটা বিষাদের ছোঁয়া। ঠিক যেন বিজয়া দশমীর মতো৷ বইমেলা হচ্ছে একটা অন্যতম উৎসব বা পার্বণ। দুর্গাপূজার মতোই প্রতি বছর আমরা বইমেলার অপেক্ষা করে থাকি। আজ ৪১তম আগরতলা বইমেলার সম্মাননা জ্ঞাপন ও সমাপ্তি অনুষ্ঠানে একথা বলেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে বইমেলা। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সৃষ্টি আজও আমাদের আলোড়িত করে। অনুষ্ঠানে প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, মানব সভ্যতা যতদিন আছে ততদিন বই পড়তে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। বই পড়ার যত ধরনের পদ্ধতি থাকুক কনভেনশনাল বা প্রচলিত বই-ই চিরন্তন। পৃথিবীকে জানতে হলে বই পড়তেই হবে। তিনি বলেন, প্রচলিত বইয়ে লেখক ও পাঠক মুখোমুখি থাকেন৷ এই প্রচলিত বই নিয়েই বইমেলার আসর বসে।
৪১তম আগরতলা বইমেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী একুশে পদকপ্রাপক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, আগরতলা আমার কাছে এক অনুভূতির জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িয়ে আছে আগরতলার নাম। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছিলেন আগরতলায়। এই শহরের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। পরবর্তী আগরতলা বইমেলার একটি দিন বাংলাদেশ দিবস হিসেবে পালন করার জন্য তিনি আবেদন রাখেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস। তাছাড়াও বইমেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মিনা রাণী সরকার, অল ত্রিপুরা বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী, ত্রিপুরা পাবলিশার্স গিল্ডের সম্পাদক অজিত দেববর্মা এবং পাবলিশার্স ও বুক সেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রাখাল মজুমদার। বইমেলার দ্বাদশ দিনে গতকাল ১৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৭১ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এই ১২ দিনে মোট বই বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫৮৫ টাকার।
বইমেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীত ও কলাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৭জন ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। এবারের মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন যীষ্ণু দেববর্মা। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। মরণোত্তর পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জাতীয় সংহতি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে স্বর্গীয় ডা. এইচ এস রায় চৌধুরীকে। তাঁর হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন পুত্র হোমাগ্নি শংকর রায় চৌধুরী।

মরণোত্তর অটল বিহারী বাজপেয়ী আজীবন স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে স্বর্গীয়
ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিককে। তাঁর হয়ে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন পুত্র বিরাট দত্ত ভৌমিক। মরণোত্তর শচীন দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে স্বর্গীয় হরেকৃষ্ণ রায়কে। তাঁর হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন মঞ্জু রায়। এছাড়াও দেবব্রত ভট্টাচার্যকে ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার, জ্যোতির্ময় দাসকে সলিল কৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার, গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসকে কালীকিংকর দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার, রামকৃষ্ণ দেবনাথকে ত্রিপুরেশ মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার, শ্যামলী দেববর্মাকে ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরস্কার, ডা. উত্তম সাহাকে লালন পুরস্কার, সুমন্ত কুমার ত্রিপুরাকে অশ্বিনী কুমার বিশ্বাস স্মৃতি যুব পুরস্কার, যদু ভূষণ শুরুদাসকে অজিত মজুমদার স্মৃতি যুব পুরস্কার, অজয় দেবনাথকে সত্যরাম রিয়াং যুব পুরস্কার ও রাজেশ সিনহাকে সুমঙ্গল সেন স্মৃতি যুব পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ত্রিপুরা বাণী প্রকাশনীকে শ্রেষ্ঠ বাংলা বই প্রকাশনার জন্য রাধামোহন ঠাকুর স্মৃতি পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ ককবরক প্রকাশনার জন্য পেনস্টার পাবলিকেশনকে দৌলত আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার এবং বাংলা ও ককবরক ব্যতীত শ্রেষ্ঠ প্রকাশনার জন্য ফুরবাড়েও প্রকাশনীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বইমেলায় মন্ডপ সজ্জার জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে পারুল প্রকাশনী, নীহারিকা ও পারুল লাইব্রেরি। উপস্থিত অতিথিগণ তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *