শ্রীঅন্ন চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে ঃ কৃষি সচিব

“এক বিশ্ব-এক পরিবার-এক ভবিষ্যত” এই ভাবনাকে সামনে রেখে মিলেট তথা শ্রীঅ চাষে রাজ্যের কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের খাদ্যাভ্যাসে মিলেট জাতীয় খাদ্য অন্তর্ভুক্তকরণে সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় এ সংবাদ জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে সচিব জানান,ভারতের প্রস্তাব মত এবং বিশ্বের ৭২টি দেশের সমর্থনে ইউনাইটেড নেশন ২০২৩ সালকে ‘আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। যার মুখ্য উদ্দ্যেশ্য হল শ্রী অন্ন চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে শ্রীঅন্নের অন্তর্ভুক্তকরণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে অধিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে ১৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের শ্রীঅন্ন চাষ করা হচ্ছে। শ্রী-অন্ন চাষে রাজ্যের কৃষকদের উৎসাহিত করতে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে আরও ৭০০ হেক্টর অর্থাৎ মোট ২০০০ হেক্টর জমিতে শ্রীঅন্ন চাষের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা স্তরে শ্রীঅন্নের উপর বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, প্রশিক্ষণ শিবির ও কর্মশালা, কৃষক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে মত বিনিময় সভা, প্রদর্শনীমূলক চাষ, মিনিকিট বীজ বিতরণ, রোড শো, শ্রীঅন্নের বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের উপর প্রচার পুস্তিকা, লিফলেট ইত্যাদি বিতরণ, বিভিন্ন প্রকার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার, জেলাভিত্তিক শ্রীঅন্ন মেলা ইত্যাদির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব জানান, রাজ্যকে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করার লক্ষ্যে এবং রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তর নিরলস কাজ করে চলেছে। তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে মোট কৃষকের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭২ হাজার জন। এরমধ্যে জমির মালিকানাধীন কৃষকের সংখ্যা ৩ লক্ষ ১৩ হাজার জন, পাট্টা প্রাপ্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লক্ষ ২২ হাজার জন এবং বর্গাদার কৃষকের সংখ্যা ৩৭ হাজার। মোট ৪ লক্ষ ৭২ হাজার জন। বর্তমানে রাজ্যে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে সেচের আওতাধিন জমির পরিমাণ ১ লক্ষ ১৯ হাজার হেক্টর।
সচিব জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার বিগত ৫ বছরে কৃষকদের সময়মত সার, বীজ ও পরিবহন খরচ বাবদ মোট ৪১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ভর্তুকি হিসাবে প্রদান করেছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯৯৩ জন কৃষকের একাউন্টে ৫৫৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্য সরকার রাজ্যের অধিকাংশ ধান চাষীদের প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমার আওতায় আনতে ২০২২-২১ সাল থেকে রাজ্যে পরিপূরক প্রকল্প হিসেবে “মুখ্যমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনা” চালু করে। আগে, যেখানে কানি প্রতি কৃষকের প্রিমিয়াম দিতে হত ২২০ টাকা সেখানে বর্তমানে কৃষক কানি প্রতি মাত্র ১০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে বীমা করার সুযোগ পাচ্ছেন। রাজ্য সরকার কানি প্রতি ২১০ টাকার প্রিমিয়াম বহন করছে।

এর জন্য রাজ্য বাজেট থেকে ২০২০-২১, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ সালে মোট ২০ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা সহায়তা ও ভর্তুকি হিসাবে প্রদান করা হয়েছে।উপকৃত হয়েছেন ১০,০৮,০৬৮ জন কৃষক
সচিব সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে মোট ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে।তাতে ৮৮,৮৪০ জন কৃষকের অ্যাকাউন্টে মোট ৩২৫ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা পৌঁছানো হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যের কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদানে রাজ্যের প্রতিটি কৃষি মহকুমায় একটি করে কৃষক বন্ধু কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দপ্তর।এরমধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ৩২টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
সচিব জানান, দপ্তরের মাধ্যমে বিগত ৫ বছরে ২৮ হাজার ৮০০টি বিভিন্ন ধরণের উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও গত ৫ বছরে রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৫৪৪টি সয়েল হেলথ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
সচিব জানান, বর্তমানে রাজ্যে মোট ২১,০০০ হেক্টর এলাকায় জৈবচাষ করা হচ্ছে। যা ২০১৭-১৮ সালে ছিল মাত্র ২০০০ হেক্টর। রাজ্যে বর্তমানে জৈব চাষীর সংখ্যা হচ্ছে ১৭ হাজার ৮৮৭ জন। তিনি জানান, রাজ্য সরকার রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে।ফলে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যের কৃষকদের গড় মাসিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৬ টাকা।
সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্যান দপ্তরের সাফল্য তুলে ধরে সচিব জানান, দপ্তর রাজ্যে সবরিকলা চাষের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৭-২৮ এই পাঁচটি অর্থবর্ষে এমব্রায়োজেনিক সেল সাশপেনশন (ইসিএস) পদ্ধতিতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টি সবরিকলা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে প্রতি হেক্টরে ১৭.৭১ মেট্রিকটন আলু উৎপাদিত হচ্ছে। আগামী দিনে আলুর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। সচিব জানান, উদ্যান দপ্তর রাজ্যে ড্রাগন ফল উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে ৫২০ জন কৃষক ৭৮ হেক্টর এলাকায় ড্রাগন ফল চাষ করছেন। এন ই সি প্রোগ্রামে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে আরও ৫০ হেক্টর এলাকায় ড্রাগন ফল চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় কৃষকদের ফল ও সব্জি চাষের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির জন্য ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪-এই তিন অর্থবর্ষে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২০২১-২২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩ লক্ষ ৯২ হাজার পরিবারকে ফল ও সবজি চাষের জন্য ৫৮ লক্ষ ৬২ হাজার টি বিভিন্ন কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে বলে সচিব অপূর্ব রায় সাংবাদিক সম্মেলনে জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস এবং উদ্যান দপ্তরের অধিকর্তা ফণিভূষন জমাতিয়া উপস্থিত ছিলেন।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *