রাজ্যের ও বি সি সমাজ আজ ও প্রত্যারনার শিকার : সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত

হাবেলী প্রতিবেদন।১৮ নভেম্বর। আগরতলা।

আজ ও পেল না সংরক্ষণ। রাজ্যের ও বি সি সমাজের জনগনের সাথে সব সরকার‌ই প্রতারনা করেছে। শিক্ষা, চাকরি সব ক্ষেত্রেই সংরক্ষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শাসকদল একটা সময় রাজ্যের ও বি সি সমাজ কে সংরক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যা প্রলোভনে ফেলে রাজ্য ব্যাপী মিছিল মিটিং সংগঠিত করতে পিছপা হয় নি। কিন্তু আজো সংরক্ষণ দেয়ার ললিপপ দেখিয়ে শাসক দল ও বি সি জনগনের সাথে প্রতারণা করছে। যার কারণে আজ ও বি সি জনগনের মধ্যে তীব্র চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।ও বি সি সমাজের জনগনের উপর নির্ভর করে রাজ্যে কোন সরকার ক্ষমতায় আসবে বা যাবে। প্রতিবার নির্বাচনের আগে ও বি সি জনগনের কাছে সংরক্ষণ দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ভোটের বৈতরণী পার হয়।তারপর আর কোন কথা বলার সুযোগ নেই।
কেন্দ্রে ভি পি সিং নেতৃত্বে সরকার গঠন হয়। তখন কেন্দ্রীয় সরকার মন্ডলকমিশনের বিল পাশ করেছিল। তখন কেন্দ্রীয় সরকার ও বি সি সমাজের জন্য ২৭ শতাংশ চাকরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণ চালু করেছিল।
আমাদের রাজ্যে ১৯৮৭-৮৮ সালে মন্ডল কমিশন চালু করার দাবিতে নাথযোগী সমাজের তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করা হয়। ১৯৮৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল। বামফ্রন্ট সরকার মন্ডল কমিশন রাজ্যে চালু করতে রাজি ছিল।
নাথযোগী সম্প্রদায রাজ্যে তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করেছিল। তখন বিধানসভা নির্বাচনের আগে আস্তাবল ময়দানে নাথযোগী সম্প্রদায়ের ডাকে বিশাল জনসমাবেশ সংগঠিত করা হয়। আজ তিপরা মথা পাহাড়ে সংগঠন শক্তিশালী করায় শাসকদল সহ সব রাজনৈতিক দল গুলো সমঝোতা করতে হন্যে দিয়ে রয়েছে।সেই সময়ের সমাবেশ দেখে তৎকালীন বিরোধী দল কংগ্রেস দল নাথযোগী সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে নির্বাচনী সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছিল।। নাথযোগীসহ ও বি সি সমাজের জনগনের ভোটে সেবার বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়।রাজ্যের ক্ষমতায় বসেছিল কংগ্ৰেস উপজাতি যুব সমিতি জোট সরকার। ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে মন্ডল কমিশন কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে বসবাস কারি ৪৪ সম্প্রদায়ভূক্ত জনগন কে ও বি সি তালিকা ভুক্ত করা হয়েছিল। গঠন করা হয়েছিল ও বি সি কর্পোরেশন। কিন্তু সংরক্ষণ চালু করা নিয়ে কংগ্ৰেস জোট সরকার শুরু করেছে তালবাহানা। সংরক্ষণ চালু করার জন্য যতীন্দ্র মজুমদার এবং শ্যামাচরণ ত্রিপুরা নেতৃত্বে দুই বার দুইটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশন বিভিন্ন রাজ্যে কিভাবে সংরক্ষণ চালু করা হয়েছে তা পর্যবেক্ষন করে এসে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দিবে।।

যতীন্দ্র মজুমদার এবং শ্যামাচরণ ত্রিপুরা কংগ্রেস জোট সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। রিপোর্ট জমা দেয়ার পর আসল তালবাহানা আরম্ভ হয়।বলা হয় সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে ৫০ শতাংশ অধিক সংরক্ষণ করা যাবে না।
কিন্তু সেই সময়েই তামিলনাডু সরকার বিধানসভা অধিবেশন থেকে অধিক ক্ষমতা বলে ও বি সিলের জন্য ২০ শতাংশ উপর সংরক্ষণ করেছিল। কিন্তু সেই সংরক্ষণ আজ ও অব্যাহত রয়েছে।
উপরন্তু রাজ্যে ও বি সি সমাজের জন্য দুই টি সার্টিফিকেট নিতে হয়।একটি রাজ্য সরকার দিয়ে থাকে। সেই সাটিফিকেট দিয়ে কোথাও চাকরি করা যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদত্ত সার্টিফিকেট দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে চাকরি সুযোগ পাওয়া যাবে।
১৮৯১ সালের দিকে সি পি আই এম ও বি সি জনগনের কাছে পৌঁছে যাবার ্লক্ষে্ ও বি সি সেল খোলা হয়।১৯৯৩ সালে ক্ষমতায় পুনরায় ফিরে আসার পর কংগ্ৰেসের মত বামফ্রন্ট ও ও বি সি বিষয়ে চুপ হয়ে যায়।
২০১৮ সালে ও বি সি এবং নাথযোগীদের ভোট পাবার লক্ষ্যে ও বি সি সমাজের কাছে ছুটে গেছেন। কিন্তু রাজ্যে যাদের পরিশ্রমে ও বি সি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছিল। ক্ষমতায় এসেই সেসব নেতৃবৃন্দ কে ছাঁটাই করে দেয়া হয়েছে।নিয়ে আসা হয় নতুন নেতৃবৃন্দ কে।
আসলে নাথযোগীসহ ও বি সি সমাজের কোন কাজে ই করা হয় নি।

বি জে পি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রতন লাল নাথকে ও বি সি দপ্তর ‌দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি যত দিন ক্ষমতায ছিলেন ও বি সিদের বিষয় নিয়ে কোন উদ্যোগ নেন নি। তিনি ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন ও বি সি সমাজের জনসংখ্যা নিরূপণ করতে সমীক্ষা করাবেন।আজো ও বি সি সমাজের আর সার্ভে করা হল না।
এখন ও বি সি দপ্তরের মন্ত্রী রাম প্রসাদ পাল। তিনি এই সমাজের উন্নয়নে জন্য কি করছেন কি না করেছেন জনগন জানতে আগ্ৰহী।

কংগ্রেস, বামফ্রন্ট সহ বিভিন্ন দলে এখন ও বি সি সেল আছে কি না সন্দেহ রয়েছে।

শাসক বি জে পি ও বি সি দের বিভিন্ন কার্যক্রম দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী রেখেছে। পাঁচ বছরে ও বি সি সমাজের জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূর্ণ হয়েছে তা সময়ই বলতে পারবে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাহলে ভোটের ফল উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে পারে।

অথচ দেশের উচ্চ বর্ণবাদী দের জন্য সরকার সংরক্ষণ চালু করেছে। এই সংরক্ষণ চালু র জন্য উচ্ছবর্ণবাদীদের মিটিং মিছিল করতে হয় নি। কারণ ভারতবর্ষে জাতপাতের রাজনীতি থাকলেও দেশের শাসনব্যবস্থার চাবিকাঠি উচ্চবর্ণবাদীদের হাতে।তাই ওরা তা চাইবে তাই হবে। রাজ্যের ও বি সি সমাজের জনগনের হাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে উচ্চবর্ণবাদীগন।ও বি সি সমাজের জনগন পৃথকভাবে ঐকবদ্ধ আন্দোলন সংগঠিত করতে ততদিন পারবে না। ততদিন চাকরি সহ সর্বত্র সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *