Habely Patrika | Read Latest Bengali News, Bangla News, বাংলা সংবাদ, বাংলা খবর from Tripura's Leading Newspaper

ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরে দেওয়ালি উৎসব ঘিরে ব্যাপক তৎপরতা : উপচে পড়া ভিড় আশঙ্কা

হাবেলী প্রতিবেদন। আগরতলা।

আগামী সোমবার দেওয়ালী তথা কালীপূজা ।সে দিন রাজ্যের সর্বত্র দেওয়ালী পূজার আয়োজন করা হবে। রাজ্যের উদয়পুর মহকুমায় অবস্থিত মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে দেওয়ালী উৎসব উপলক্ষে বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়।প্রতি বছর এই মেলার আসর এখানে বসানো হয়। দেওয়ালী উৎসব উপলক্ষে রাজ্য বহিরাজ্য থেকে লাখো লাখো দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। এই বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দেওয়ালী পূজার দিনে পূনার্থীদের অনেক বেশি সমাগম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন না গত দুই বছর করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। সেই জন্য মেলায় পূনার্থীদের সমাগম কম হয়েছিল। এই বছর করোনা প্রাদুর্ভাব নেই। সেই জন্য এইবার দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দেওয়ালী উপলক্ষে মন্দিরকে বিশেষ ভাবে সাজ্জিয়ে তোলা হয়। এই বছর মন্দির সাজিয়ে তোলার কাজ অনেক আগেই শেষ করা হয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। এই উপলক্ষে মন্দিরকে আগাম সাজ্জিয়ে তোলা হয়েছিল।

দেওয়ালী উপলক্ষে প্রতিবছর এখানে মেলা বসে। মন্দিরের সামনে দিঘি রয়েছে। সেই দিঘির চার দিকের পাড়ে এবং মন্দিরে র চারিদিকে মেলায় অংশগ্রহণ কারী ব্যবসায়ীগন বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে দোকান খুলেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগন এখানে মেলাতে দোকান খুলে বসেন। একদিনের মেলাতে ভালোই বিক্রীভাট্টা হয়। মেলায় অংশগ্রহণকারীগন এই মেলায় দোকান খুলতে সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন। দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় হলে বিক্রী ও ভালো হয়।
এই বারের দেওয়ালীতে বৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া দপ্তর।যদি বৃষ্টি হয় তাহলে মেলায় অংশগ্রহণকারীগন ব্যবসায়ীগন প্রচন্ডভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
বৃষ্টি হলে দেওয়ালীতে আশা পূর্ণার্থীদের ও প্রচন্ড অসুবিধায় পড়তে হবে। সমগ্র উদয়পুর শহরে শুধু পূর্ণার্থী আর পূর্ণার্থীদের ভিড় হবে। বৃষ্টি হাত থেকে রক্ষা পেতে কোথাও দাঁড়াতে পারবে না।

মেলা উপলক্ষে আগরতলা থেকে উদয়পুর, সাব্রুম থেকে উদয়পুর , সোনামুড়া থেকে উদয়পুর শহরে মধে্ যানবাহন পরিষেবা চালু করা হবে।
এছাড়া উত্তর পূর্বাঞ্চলের রেল কর্তৃপক্ষ দেওয়ালি উপলক্ষে ধর্মনগর থেকে সাব্রুম পয্যন্ত স্পেশাল ট্রেন চালু করা হবে বলে সকলে আশাবাদী।

দেওয়ালি মেলা উপলক্ষে আপনি রাত্রিবাস করতে আগ্ৰহী হন। তাহলে আগে থেকেই উদয়পুর পর্যটন আবাস বুকিং রাখতে হবে। নয়তো দেওয়ালী দিন রাতে থাকতে পারবেন না।

উদয়পুর শহরে বিভিন্ন রকমের হোটেল রয়েছে।
সেখানে ও রাত্রিযাপন করতে পারেন।

পরিবহন;- আগরতলা থেকে উদয়পুর শহরের রাজারবাগ মোটরস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাত্রী বাস যাতায়াত করে। এছাড়া বিলোনীয়া , সাব্রুম ,অমরপুর ,গন্ডাছড়া, যতনবাড়ি , করবুকসহ দক্ষিণ গামি সব যাত্রীবাস উদয়পুর শহরের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। সেই সব বাসেও যাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ৪০ টাকা।
এছাড়া ছোট গাড়ি আগরতলা শহর থেকে উদয়পুর পর্যন্ত রিজার্ভ নেয়া যেতে পারে।ভাড়া ১৫০০ টাকা হবে। কথা বলে ঠিক করে নিলে ভালো হবে।

এছাড়া আগরতলা সাব্রুম পয্যন্ত রেল যোগাযোগ রয়েছে। আগরতলা বাধারঘাটা রেল ষ্টেশন থেকে উদয়পুর হয়ে সাব্রুম যাবে।একঘন্টার পথ। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে আপনি রেলে যেতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি লাগবে ২০ টাকা।দেওয়ালীতে বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।গাড়ি বা রেল থেকে নেমে আপনাকে তিন / চার কিমি পথ যেতে হবে। মেলার জন্য তখন কোন যানবাহন মন্দিরে সামনে দিয়ে যেতে আরক্ষা প্রশাসন থেকে অনুমতি দেয়া হয় না।
দীঘি :-। মন্দিরের সামনে বিশাল দিঘি রয়েছে।এটি মহারাজার আমলে খনন করা হয়েছিল। বিশাল জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে কচ্ছব এবং বড় বড় মাছ। এদের জন্য বিস্কুট,মুড়ি, কেক সহ শুকনো খাবার নিয়ে জলে ফেলে দিবেন।এরা খাবারের জন্য ছুটে আসবে।তখন এদের ক ধরে আদর করতে পারবেন। দেখবেন এরা যখন জলের মধ্যে খেলতে থাকবে । দেখবেন কত সুন্দর লাগবে। দেওয়ালীর সময় দিঘির চারিদিকে লাইটিং করে দেয়া হয়। লাইটিং আলো জলের মধ্যে পড়ে তখন দিঘীর জলের সৌন্দর্য অপূর্ব হয়ে ওঠে।

মন্দিরের ইতিহাস :-
মহারাজা ধন্যমানিক্য উদয়পুর শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আগরতলা সাব্রুম জাতীয় সড়কের পাশে এটি একটি ছোট টিলা উপর নির্মাণ করা হয়েছে। আগরতলা শহর থেকে ৫৪ কিমি দূরে।১৫০১ খ্রিষ্টাব্দে মন্দির নির্মাণ করে রাজা বাংলাদেশ চট্টগ্রাম থেকে দেবী মূর্তি কে এনে প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে প্রতিদিন পূজা করা হয়।সারা বছর এখানে পূর্ণার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। মন্দিরের সাথে কর্কট ক্রান্তি রেখার সম্পর্ক রয়েছে।
ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির ছাড়াও উদয়পুর শহরের উপরে ভৈরব মন্দির, মহাদেব বাড়ি, বিষ্ণু মন্দির, । রয়েছে ধন্যসাগরসহ আরও অনেক গুলো জলাশয়।

মায়ের মূর্তি :- কালো কষ্টি পাথরের ষোড়শী কালিমূর্তি।
যার উচ্চতা ১ মিটার এবং প্রস্থ ৫৭ সেন্টিমিটার।পঞ্চমুখের আসনে স্থাপন করা হয়। দেবী শিবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছে।হাত ৪টি। ডানদিকের উপরের হাতে বরমুদ্রা, এর নীচে হাতে অভয় মুদ্রা,। বামদিকে উপরের বা হাতে হা খড়গ, নীচের হাতে অসুর মুন্ড। গলাতে রয়েছে ১৩ টি মুন্ডের মালা। মুখ গোলাকৃতি। নাক চ্যাপটা ছোট।ছোট ছোট।জিভ সুন্দর নয়। মহারাজার আদেশে সেনাপতি রসাঙ্গমর্দন এই মূর্তি আজকের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।

মায়ের সাথে মন্দিরে ছোট মা একজন রয়েছে। তিনি ও সব সুজিত হন।মুর্তির উচ্চতা ৪৮ সেন্টিমিটার।প্রস্থ ৩৫ সেন্টিমিটার। শোনা যায় মন্দিরে সামনে দীঘি খনন করার সময় পাওয়া যায়।আবার শোনা যায় বিষ্ণু মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে রাজা উদ্যোগি হয় ।তখন রাজাকে স্বপ্ন দেখেন দেবী কালিকাকে এখানেই নিয়ে আছে।

পূজা পদ্ধতি:- প্রতিদিন ভোর ৪টায় মঙ্গলারতি মাধ্যম মাকে ঘুম থেকে তোলাহয়।ঘুম থেকে উঠার পর ৫ টায় বাল্যভোগ।
তারপর সকাল ৮টায় স্নান ও শৃঙগার করা হয়
৯টার সময় নিত্যপূজা, । সকাল এগারোটায় বলির কাজ শুরু হয়। প্রথমে সরকারি ভাবে দেওয়া পাঁঠা বলি দেয়া হয়। তারপর পূর্ণার্থীদের পাঁঠা, হাঁস, কবুতর বলি দেয়া হয়।দশমী দিন কোন ধরনের বলি দেয়া হয় ।

দুপুর বারোটায় মায়ের পুস্পাজ্ঞলী দেয়া হয়। এরপর দুপুর দেড়টায় পঞ্চব্যঞ্জন , পাঁঠার মাংস, লুচি,মিষ্টিসহ অন্নভোগ দেওয়া হয়।
দুপুর ২-৩ টা পর্যন্ত বিশ্রাম।
মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে।আর দরজা খোলা হয় না। দর্শনার্থী অন্নভোগ কুপন কেটে ভোগ সংগ্ৰহ করতে পারেন।
সন্ধ্যা সময় সন্ধ্যারতি করা হয়।রাত ৯ টায় শীতলভোগ । দশটার সময় মা নিন্দ্রাতে চলে যায়।
প্রতি অমবশ্যার রাতে ১ মহিষ, ৫টি পাঁঠা, ১টি হাঁসের ডিম, আদা বলি দেয়া হয়। এই সব জিনিস সরকার দিয়ে থাকে।
দেওয়ালী দিন এবং দুর্গা পূজার অষ্টমীতে দুই বার পূজা করা হয়।

মন্দিরের জায়গা নির্বাচন:- ভারতের যেসব রাজ্যের উপর দিয়ে ২৩.৫ ডিগ্ৰি উত্তর অক্ষাংশে বা কর্কটক্রান্তি রেখা গেছে তার মধ্যে ত্রিপুরা ও রয়েছে।এটি উদয়পুর উপর দিয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তে কর্কটক্রান্তি রেখা গুরুত্বপূর্ণ। কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে মকরক্রান্তি রেখা পর্যন্ত কোন সময় সূর্য লম্বভাবে আলো দেয়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।