হাবেলী প্রতিবেদন।
সময়ের প্রয়োজনে সব কিছুই গঠন করতে দেশের সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।।তার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আজকের তিপরা মথা দল গ্ৰেটার তিপরাল্যান্ড গঠনের ডাক দেওয়াতে রাজ্য বাসীর জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।তা কি আদৌ সম্ভব ? আমাদের সংবিধানে র নিয়ম অনুযায়ী সম্ভব। জনগনের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে যেকোন ক্ষমতা, অধিকার দেয়া হয়।
রাজ্যের জনজাতি কিছু যুবক ১৯৬৭ সালে তাদের অধিকার আদায় করতে উপজাতি যুব সমিতি জন্ম হয়েছিল । অবিভক্ত সদর মহকুমা অন্তর্গত কান্তাকোবরা পাড়ায় এর পত্তন হয়।
সেই বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন প্রথম সারির নাম তুলে ধরা হয়েছে।এরা হলেন নগেন্দ্র জমাতিয়া, শ্যামাচরণ ত্রিপুরা, বুদ্ধ দেবর্বমা, দ্রাউকুমার রিয়াং, দশরথ দেব , হেমন্ত দেবর্বমা, সুখদয়াল দেবর্বমা, হরিনাথ দেবর্বমা, বিশ্বরথ দেবর্বমা, রতিমোহন জমাতিয়া, গৌরি শঙ্কর রিয়াং ,বাজুবন রিয়াং,, বীরবিক্রম জমাতিয়া সহ আরও অনেকে সংগঠনে ছিলেন।
পরে দশরথ দেব, জিতেন চৌধুরী, বাজুবন রিয়াং অনেকেই পররর্তীতে সি পি আই এম এ যোগদান করেন।।
কান্তাকোবরা পাড়ায় তিনদিন সন্মেলন হয় ৯/১০/১১ জুন ১৯৬৭ সনে।
ত্রিপুরা রাজতন্ত্রের অবসান হয় ১৯৪৯ সালে। ভারত স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭ সালে।
ইংরেজ দীর্ঘ ২০০বছর ভারত শাসন করেছে। কিন্তু স্বাধিন দেশ তখন রাজার অধিনে ত্রিপুরা পরিচালিত হয়েছে।১৮৪ মহারাজা ত্রিপুরা পরিচালনা করেছেন। বিশ্বের মধ্যে ত্রিপুরা মহারাজা গন দীর্ঘ বছর শাসন করেছে। জাপানের সাথে ত্রিপুরার তুলনা করা যেতে পারে। মহারাজারদের শাসনে জনগনের উপর বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে। একমাত্র ত্রিপুরার মহারাজা গন শান্ত এবং সাম্প্রদায়িকতার উপরে থেকে
শাসনতন্ত্র পরিচালনা করতেন। এখানে জনজাতিদের সাথে মিশে অনুপজাতি এবং সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করেছেন।
নোয়াখালীতে গনহত্যা সংগঠিত হবার জন্য আত্মরক্ষার্থে অনুপজাতি অংশের জনগন মহারাজার আমলে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই দিন মহারাজা এদের কে স্বাদরে গ্ৰহন করেছেন। তাদের কে থাকতে দিয়েছেন।
ত্রিপুরা ভারতভূক্ত হবার পর চিন ভারত, পাকিস্তান ভারত যুদ্ধ হয়। সেই সময়েও পাকিস্তান থেকে অনুপজাতি অংশের জনগন এসে রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন।এরা ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় বসতি গড়ে তোলেন।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তান থেকে আগত জনগন বসতি গড়ে তুলতে থাকে।ফলে জনজাতিদের জমির সংকট হতে থাকে। বেআইনি ভাবে অনেকেই জমি দখল করে বসতি গড়ে তুলতে থাকে। পাকিস্তান থেকে এসে অনেকেই জনজাতির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ওরা ও আশ্রয় দিয়েছিল। তখন একটি ক্ষুদ্রাংশ জনজাতি পরিবারের জমি বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে দখল করে নেয়। অনেক জনজাতি পরিবার জমি জমা খুইয়ে দারিদ্র্যতার কবলে গিয়ে পৌঁছে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভারত যুদ্ধের সময় প্রচুর লোককে ত্রিপুরা থাকতে দিয়ে ছিল। সেই সময় অনুপজাতি অংশের জনগন ত্রিপুরা ছেড়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পর ফিরে যায় নি।বিশাল অংশের জনগনের চাপ রাজ্যের উপর পড়ে।এক লাফে রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর প্রতিদিন বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রিপুরায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন।চাপ পড়তে থাকে জমি, খাদ্য বাসস্থান সহ সবকিছু র উপর। জনজাতিদের থেকে কোনো রূপ অসহযোগীতা তখন কেউ পায় নি । বিতারিত হয়ে আসা জনগনের চাপ বাড়তে থাকে। তখন ১৯৬৮ সালে উপজাতি যুব সমিতি র ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা হয়। বর্তমান জিরানীয়া মহকুমার কলাবাগানের রবিচরণ ঠাকুর পাড়ায় প্রথম টি এস এফের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।প্রথম রাজ্য কমিটির সভাপতি সুখময় দেবর্বমা এবং সম্পাদক নগেন্দ্র জমাতিয়া হয়েছে।
১৯৬৯ সালে দুর্গা চৌধুরী পাড়া য় রাজ্য সন্মেলন হয় । সেই সময় যুব সমিতি থেকে দাবি তোলা হয় উপজাতি দের বেআইনি দখলকৃত জমি পুনরুদ্ধার, স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠনের দাবি গৃহীত হয়।
সেই থেকে রাজ্যে বেআইনি জমি ফেরৎ আইন কার্যকর করে তৎকালীন কংগ্ৰেস সরকার।
১৯৭৩ সাল ১০ মে তেলিয়ামড়ার হদ্রাতে জাতি উপজাতি মধ্যে জমি দখল নিয়ে বিরোধ বেঁধে ছিল। সেই বিরোধে পড়ে বীরবিক্রম জমাতিয়া নিহত হয়। অভিযোগ জনজাতিদের জমি বেআইনি ভাবে জবর দখল করে ছিল। বেআইনি জমি পুনরুদ্ধার করতে গিয়েই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বীরবিক্রম জমাতিয়া নিহত হবার পর তখন এই বিষয় টিকে সামনে রেখে জনজাতিদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা পারদ চড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। তখন ই কংগ্ৰেস সরকার রাজ্যে বেআইনি জমি হস্তান্তর আইন চালু করেছেন।জমি হস্তান্তর আইন কার্যকরি হবার পর জনজাতিদের জমি দখল কমতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের ধারণা সেই দিন জমি হস্তান্তর আইন চালু করা না হলে জনজাতিদের জমি রক্ষা করা কঠিন হত।
সেই সময় টি ইউ জে এস ডাকে জনজাতি এলাকায় তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করা হয়।
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সালে রাজ্যের জনজাতি ছেলে মেয়ে টি এস এফ আন্দোলন কে তীব্র পযায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।১৯৭৬ সালে ১ লা জানুয়ারি জমি হস্তান্তর আইন কার্যকর করার দাবিতে তীব্র আন্দোলন সংগঠিত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠনের দাবিতে রাজ্যে অমান্য আন্দোলনের ডাক দিয়ে ছিল ১০ অক্টোবর ১৯৭৭ সালে। আইন অমান্য আন্দোলনের তীব্রতা এত বেশী ছিল যে রাজ্য সরকার আন্দোলন কে ভেঙ্গে দিতে বিভিন্ন পথে অগ্ৰসর হয়েও সেই আন্দোলন কে বিপথে পরিচালিত করতে পারে নি।
১৯৭৬ সালে রাজ্যে সি এফ ডি সরকার ক্ষমতায় ছিল।
১৯৭৭ সালে রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। মুখ্যমন্ত্রী হন নৃপেন চক্রবর্তী। শিক্ষা মন্ত্রী হন জনমুক্তি পরিষদের নেতা দশরথ দেব।
উপজাতি যুব সমিতি কে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য বামফ্রন্ট ১৯৭৯ সালে ১৯ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রী দশরথ দেব জনজাতির মাতৃভাষা ককবরকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।তখন থেকে জনজাতীদের মাতৃভাষা ককবরকে স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয়।
বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য বিধানসভা ক্ষমতা বলে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা আরস্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠন করতে ৭ ম তফশিলী বিল বিধানসভা গ্ৰহন করা হয়। গঠন করা হল এ ডি সি।
উপজাতি যুব সমিতি রাজ্য সরকারের এই ধরনের স্বশাসিত জেলা পরিষদ মেনে নিতে রাজি হয় নি। তাদের দাবি ছিল ষষ্ট তফশিল মোতাবেক এ ডি সি গঠন করতে হবে।
১৯৭৯ সালে রাজ্য বিধানসভা তে সপ্তম তফশিল মোতাবেক রাজ্যে এ ডি সি গঠনের জন্য বিল পেশ করা হয়। সেই বিল ১৯৮০ সালে বিলটি গৃহীত হয়।
এদিকে রাজ্য সরকারের এই বিলের বিরোধিতা করে যুব সমিতি রাজ্য ব্যাপি তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করে।
১৯৭৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উপজাতি যুব সমিতি নির্বাচনে লড়াই করে। সেই নির্বাচনে যুব সমিতি একমাত্র প্রার্থী নগেন্দ্র জমাতিয়া প্রথম জয়ী হয়। একা বিধানসভার ভেতরে জনজাতির স্বার্থ রক্ষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। একজন বিধায়কের চাপে রাজ্য সরকার জনজাতিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিল বিধানসভায় গ্ৰহন করতে বাধ্য হয়েছিল।
কিন্তু উপজাতি যুব সমিতি তাদের আন্দোলন থেকে সরে আসেনি।
১৯৮০ সালের আগে বিল পাশ করিয়ে দিয়ে সমিতি কে ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু এই সময়ে সপ্তম তফশিল মোতাবেক স্বশাশিত জেলা পরিষদ নির্বাচন করতে হবে।
কিন্তু এই সময়ে ১৯৮০ সালে ৬ জুন রাজ্যে ভ্রাতৃঙ্গাতি দাঙ্গা সংগঠিত করা হয়েছে।জাতি উপজাতির মধ্যে শুরু হয়ে যায় অবিশ্বাস বাতাবরণ
।আর করা হয় নি নির্বাচন। বামফ্রন্ট মনোনীত পরিচালন কমিটি দিয়ে এ ডি সি কাজ কর্ম শুরু করেছিল।
সেই সময় কেন্দ্রে ছিল অকংগ্রেসি সরকার। কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী দাঙ্গা সংগঠিত হবার পর রাজ্যে এসেছিল। তখন তিনি যুব সমিতি র সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ছেন। তাদের দাবি সম্পর্কে অবহিত হন।
১৯৮৩ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে যুব সমিতি চারটি আসনে জয়লাভ করে ছিল। এরা হলেন নগেন্দ্র জমাতিয়া, শ্যামাচরণ ত্রিপুরা, হরিনাথ দেবর্বমা এবং দ্রাউকুমার রিয়াং।বাকি আসনগুলোতে বামফ্রন্ট প্রার্থী জয়লাভ করে রাজ্যের ক্ষমতায় পুনরায় ফিরে আসে।
১৯৮০ সাল থেকে রাজ্যে শুরু হয়ে যায় তথাকথিত উগ্ৰপন্থী কার্যকলাপ। টি এন ভি নাম ধারণ করে বিজয় রাঙ্খল নেতৃত্বে উগ্ৰপন্থী কার্যকলাপ রাজ্যে শুরু হয়।
১৯৮৪ সালে ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধী নির্দেশ মোতাবেক আসাম রাইফেল ব্রিগেডিয়ার আগরতলাতে এসে যুব সমিতি নেতৃত্বেকে জানান তাদের কে দিল্লীতে তলব করেছে ন । তখন শ্যামাচরণ ত্রিপুরা, হরিনাথ দেবর্বমা, নগেন্দ্র জমাতিয়া এবং দ্রাউকমার রিয়াং দিল্লী ছুটে গেছেন। বেশকিছু দিল্লীতে অবস্থান করার পর একদিন শ্রীমতী গান্ধীর সাথে স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠন করা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তখন তিনি তাদের কে বলেছেন আমি কথা দিলাম ক্ষমতায় আসার পর এ ডি সি গঠন করা হবে।
এছাড়া ১৯৮৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজেন্দ্র কুমারী বাজপেয়ী সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে জগদীশ দেবর্বমা জানিয়েছেন।
১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ তা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে। ক্ষমতায় ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালে সংবিধান সংশোধন করেন। সংবিধান সংশোধন করে ১৭ আগষ্ট ১৯৮৪ সালে সংসদের অধিবেশন বিল পেশ করেন। সর্বসন্মত ভাবে বিল সংসদে গৃহীত হয়েছে। তারপর ১৯৮৪ সালে ২৩ আগষ্ট ষষ্ট তফশিল মোতাবেক ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি।
সপ্তম তফশিল মোতাবেক এ ডি সি তে প্রথম নির্বাচিত সংগঠিত করা হয় ১৯৮২ সাল জানুয়ারি তে।
সেই নির্বাচনে চেয়ারম্যান নারায়ন রূপিনী ভাইস চেয়ারম্যান অঘোর দেবর্বমা
দায়িত্বে ছিলেন। চেয়ারম্যান ছিলেন সর্বেসর্বা।
এরপর রাজ্য সরকার ১৯৮৫ সালে ১ লা এপ্রিল প্রথম জেলা পরিষদের নির্বাচন সংগঠিত করা হয়। সেই নির্বাচনে বামফ্রন্ট বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে এ ডি সি তে ক্ষমতায় বসেছে। তখন চেয়ারম্যান পদে বসেন নারায়ন দেবর্বমা এবং মুখ্যকার্যনির্বাহী সদস্য পদে অঘোর দেবর্বমা। মুখ্যকার্যনির্বাহী সর্বেসর্বা।
এ ডি সির সদর দপ্তর আগরতলাস্থিত উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদের মধ্যে কাজ কর্ম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু যুব সমিতি র বিধায়ক হরিনাথ দেবর্বমা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। চাপে পড়ে বামফ্রন্ট সরকার বাধ্য হয়ে পরর্বতীতে এ ডি সি এলাকার মধ্যে সদর দপ্তর খুমুলুঙ এ স্থাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই দিন যুব সমিতি তীব্র আন্দোলন সংগঠিত না করতেন তাহলে সদর দপ্তর খুমুলুঙ গডে তোলা সম্ভব হতো না বলে জগদীশ দেবর্বমা জানিয়েছেন।