হাবেলী প্রতিবেদন। ৯ অক্টোবর। আগরতলা।
আজ কোজাগরী লক্ষীপূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের সকলের ঘরে ঘরে লক্ষীপূজা হয়ে থাকে।পুরাণের অনুযায়ী কো জাগর্তী থেকে কোজাগরী শব্দের উৎপত্তি।কো জাগর্তি শব্দ অর্থ হল কে জেগে আছো। তিনি এই রাতে সারারাত জেগে থাকেন। সেই জন্য এই পুজোর রাতে জেগে থাকার রীতি রয়েছে। তিনি ভ্রমনে বের হয়ে যাদের দর্শন পান তাকে ধন সম্পদে ভর পূর করে দেন।
কার্তিক সংক্রান্তি দিনে কল্যাণ করিয়া আড়াই মুঠা কাটিয়া লক্ষীপূজা হইয়া গিয়াছে। গন দেবতা -উপন্যাসে প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় একথা বলেছেন।
শ্রাবণ মাসে চাষী ধান রোপণ করেন। আশ্বিনের শেষে ধানের ঘ্রানে এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেই সময় লক্ষী পূজা করা হয় । সেই জন্য আড়াই মুঠা ধান কেটে এনে লক্ষী পূজার সময় তার পাশে রেখে দেয়া হয়। সেই জন্য অনেকেই পুজো র সময়ে ধানের ছড়া এবং কলার ডোল বানিয়ে পাশে দেয়া হয়।
লক্ষী সৌন্দর্য ও স্বিগ্ধ।তার প্রতীক পেঁচা। সুন্দর দুই হাত বিশিষ্ট।পদ্মের উপরে লক্ষী বসেন। গায়ের রং ধূসর সাদা , উজ্জ্বল হলুদ,নীলাভ । তিনি সম্পদের দেবী।শান্ত প্রকৃতির দেবী।উনার পূজাতে কাসর ঘন্টা বাজানো নিষেধ।তারা বাজান তাদের অমঙ্গল হয়।তুলসী পাতা ও লক্ষী পুজোতে ব্যবহার করতে পারে না।
লক্ষী সারা বছর ব্যাপী পুজিত হয়ে আসলে ও আশ্বিনের শুক্লা তিথির পূর্ণিমা তে বড় লক্ষীকে কোজাগরি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুজো করা হয়।একাত্ত্ববোধের সৃষ্টি হয়। ধন সম্পদ ভাড়ে বলে সকলে এই লক্ষীকে যত্ন সহকারে ভক্তি ভরে পূজা করা হয়
আজ কালকে লক্ষীপূজাকে কেন্দ্র করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্ৰী আকাশ ছোঁয়া দাম।ঊদ্ধমুখী দাম থাকায় জনগনের নাভিশ্বাস । দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রনে রাখতে সরকারের কোনো ধর উদ্যোগ নেই।
এসো মা লক্ষ্মী,
বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষন তোমার পূজা করি,
ততক্ষন তুমি আমার ঘরে স্থির হয়ে থাকো মা ।
এই হল মন্ত্র।
পূজা ব্রাক্ষ্মণ ধারা ও করা যায়। আমার নিজের মত করে পাঁচালী পড়েও করা যেতে পারে। ফুল , বেলপাতা, দূর্বা, হরতকি সহ নানা সামগ্ৰী নেয়া হয়।ঘট ।ঘটের উপর আম্র পল্লব।তার উপর ফল , ফুল দেয়া যেতে পারে।
এই সব কিছু দিয়ে পুজো দিয়ে তাকে মন ভরে কিছু সময় মনে মনে ধ্যান করা হয়।
আজকের দিনে প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন প্রজাতির ফল প্রসারি, তিল, নারকেল, খৈ, মুড়ি ,চিড়া সহ নানা ধরনের নাড়ু তৈরি করা হয়।আরো তাকে লুচি সুজি পায়েস ইত্যাদি।
সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে সকল ঘরে ঘরে চলে লক্ষীপূজার আয়োজন। সাথে সাথে শুরু হয় বাড়িতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়া। ছোট বড় সকলে মিলে বিভিন্ন রকমের বাজি ফোটাতে থেকে। পূজা শেষ হবার সাথে সাথে শুরু হয় প্রসাদ বিতরণ করা হয়।একে অপরের বাড়িতে গিয়ে প্রসাদ নেন।
আরো রয়েছে রাতে চিড়া,মুড়ি,কৈ, নাড়ু, কলা, গুড় ,চিনি, নারকেল একসাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এই খাবার জন্য পুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই প্রতিটি বাড়িতে প্রস্তুতি চলতে থাকে। মহিলা রা এই নিয়ে প্রতিটি বাড়িতে পূজার অধিক রাত পর্যন্ত চলে ব্যস্ততা। এছাড়া চলে রাত জেগে পিকনিকের আয়োজন।এক আনন্দঘন পরিবেশে রাতটি অতিবাহিত হয় ।থাকে না ধনি গরিবের ভেদাভেদ।শহরের মধ্যে এইসব দেখতে পাওয়া যায় খুব ই কম।
লক্ষীপূজার রাতে আদা, হলুদ চুরি করার রেওয়াজ রয়েছে।গ্ৰামীন এলাকায় এটি করে বিশেষ আনন্দ উপভোগ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি কে অন্য পথে নিয়ে যাওয়ার কারণে এখন অনেক ই এটিকে পছন্দ করে না।
এই দিনে কলা গাছের খোল দিয়ে নৌকা বানিয়ে তাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসিয়ে জলে ভাসিয়ে দেয়ার রীতি রয়েছে। চাষী জমিতে মোমবাতি এবং ধুপ দিয়ে আসে সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে।
দূর্গা পূজার সময় প্রতিটি মেয়ে বাপের বেড়াতে যায়। কিন্তু লক্ষীপুজোর আগের দিন সকল বধু লক্ষী পূজা করতে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে।এই হল নিয়ম।