বিপ্লব দেব পুনরায় মন্ত্রী?

হাবেলী প্রতিবেদন।৬ অক্টোবর। আগরতলা।

বিপুল কুমার দেব আবার মন্ত্রী হবেন। একথা শুনে আঁতকে উঠলেন। না। আঁতকে উঠার কিছুই নেই। পরিবেশ সে দিকে অগ্রসর হচ্ছে । আমি মনে করছি।

বলছিলাম রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। আচমকা মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কথা শুনে তিনি কোন শব্দ না করে এক বাক্যে দিল্লী থেকে সোজা রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র সঁপে দিলেন

মুখ্যমন্ত্রী পদে অনেকেই বসতে চেয়েছিলেন। মনে মনে জামা কাপড় কিনে ইস্তি করে রেখেছিলেন। কিন্তু বিপ্লব কুমার দেব উনার ফেলে যাওয়া শুন্যস্থানে ওনার কাছের মনের মানুষ ছাড়া রাজ দন্ড তুলে দিতে রাজি নয়। রাম বনবাসে যাবার সময় ভরত কে রাজ্য পরিচালনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ভাবে ভরত রাজ্য পরিচালনা করেছেন।
সেই রকম ভারতীয় জনতা পার্টি রাজ্য সভাপতি পদে বিপ্লব কুমার দেব পরিবর্তন করে কাকে দায়িত্ব দেয়া হবে।তাই নিয়ে দলের রাজের এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দৌড় ঝাঁপ করে দিশেহারা। শ্রীদেব মানিক সাহা কে পূর্বসূরী পদে বসাতে একবার ও চিন্তা করে নি।শ্রীদেবের মনোনীত প্রার্থীকে রাজ্য সভাপতি পদে বসানো হয়েছে।
রাজ্য সভার একমাত্র আসনে শ্রীদেব মানিক সাহা কে মনোনীত করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রাজ্য সভায় মানিক সাহা কে বসিয়ে দেন। রাজ্য সভার প্রার্থী হন শ্রীসাহা।তখন দলের একাংশ বিধায়ক ক্রশ ভোটিং করেছিল।

শ্রীদেব মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি পদ হারানোর পর তিনি একমাত্র সাধারণ বিধায়ক ছিলেন। সাধারণ একজন বিধায়ক হয়েও তিনি দল প্রশাসনের মধ্যে সমানভাবে কাজ করে গেছেন। যা নিয়ে দলের অন্দরে এবং দলের বাইরে কম সমালোচনা সহ্য করতে হয় নি শ্রীদেবকে। সকলের অভিযোগ ছিল সাধারণ বিধায়ক হয়ে রাজ্যের ‌ সর্বত্র দলীয় এবং প্রশাসনের অনুষ্ঠানে সমান ভাবে উপস্থিত ছিলেন। দলের ভিতকে শক্তিশালী করতে তিনি রাজ্যের এই প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত চষে বেড়ায়েছেন। সাথে ছিল সহযোদ্ধা স্ত্রী। আপদে বিপদে তিনি সাথে রয়েছেন। পিতৃসত্য পালন করতে রাম যখন বনবাসে যায়।তখন সীতা সকল রাজ সম্পত্তি ছেড়ে রামের সাথে চলে গেলেন। সেই রকম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন শ্রীদেব। সেই নীতি দেব বলেছিলেন। ভগবান যখন পরিস্থিতিতে থাকতে দিবে । সেই পরিবেশই মেনে নিতে হয়।সময় যখন হবে তা পাওয়া যাবে। নীতি দেব সব ক্ষেত্রে বিপ্লব দেবের সঙ্গে রয়েছেন।

রাজ্য সভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ ডাক্তার মানিক সাহা। তখন ও আশা করেছিলেন। রাজ্য নেতাদের অনেকেই শুন্য পদে দায়িত্ব পাবেন। অনেকেই চেষ্টা করেছেন। দলের বিশাল অংশের কর্মকর্তা ভেবেছিলেন শ্রীদেব রাজনীতি তে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় শ্রীদেব সফল একজন সংগঠক তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
রাজ্য কমিটি তিন থেকে পাঁচ জনের একটি কোর কমিটির জোটি রয়েছেন বলে আমার অভিমত। দল এবং প্রশাসনের কাছ এদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি করে নিচ্ছে।

রাজ্য কমিটির সভাপতি পদে প্রাক্তন সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সভাপতি মানিক সাহা মতামতের ভিত্তিতে রাজীব ভট্টাচার্য কে রাজ্যের সংগঠন ছড়ি তুলে দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্যের সকল কর্মকর্তা একবাক্যে মেনে নিতে বাধ্য হয়। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী পর্যন্ত মুখ খুলতে সাহস পায় নি।

প্রাক্তন কার্যকর্তাসহ দলের বিশাল কর্মকর্তা তেমন বিপ্লব কুমার দেবের কাজ নিয়ে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়তে হয়। তারপর ও তিনি কাজ থেকে সরে পড়েন নি।

রাজ্য সভার একমাত্র আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বিপ্লব কুমার দেব তেমনভাবে অনুমোদন করিয়ে আনতে সক্ষম হন। শুধু তাই নয় সাথে হরিয়ানা রাজ্যের ভারতীয় জনতা পার্টির অবজারভার হন। অনেকেই ভেবেছিলেন শ্রীদেব রাজ্য রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই কাজ করেছেন।তা ভূল।শ্রীদেবের রাজনৈতিক পরিধির ব্যাপকতা বেড়েছে।
রাজ্য সভার নির্বাচনে তিনি যখন প্রার্থী হন। তখন দলের অন্দরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে বলে প্রচার হয়। কিন্তু রাজ্য সভার উপনির্বাচনে শ্রীদেব দলের ভোটে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় নি। দলের সকল বিধায়ক গন তাকে ভোট দিয়েছেন।

তিনি বিধানসভা সদস্য পদ ত্যাগ করতে বিধানসভা সকল সদস্য সদস্যদের সাথে করমর্দন মাধ্যম সভাকক্ষ ছেড়েছেন।

রাজ্য সভার সদস্য পদে শপথ নেওয়ার আগে ই তিনি হরিয়ানা রাজে দলের সাংগঠনিক কাজে ছুটে গেছেন। তিনি সেখানেও দলের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করে সকলের মন জয় করতে পারেন।
রাজ্যে দূর্গা পূজার সময় এখানে উপস্থিত ছিলেন। পূজার কয়দিন রাজ্যের সাব্রুম থেকে ধর্মনগর সর্বত্র জাতি উপজাতি সকল এলাকায় পূজা মন্ডপে ছুটে গেছেন।মিশেছেন সকল অংশের জনগনের সাথে। এই সফর উনার রাজনৈতিক মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

শ্রীদেব দলের নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার সদস্য সদস্যাদের সাথে অন্তরঙ্গ রয়েছে। বাড়িতি পাওয়া সহধর্মিণী মাধ্যমে ও। যা ত্রিপুরার মত ছোট্ট একটি রাজ্যের পক্ষে পাওয়া দূর অস্ত। দিল্লীতে অবস্থান কালে তিনি দলের অনেকর সাথে পরিচিতি হয়েছেন। সেই পরিচিত উনাকে রাজনীতি তে আগামী দিনে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রাজ্যের একসময়ের মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ কংগ্রেসের তৎকালীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে যখন তখন কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি কথা বলতে পারতেন।
তারপর রাজ্যের ক্ষমতায় কংগ্রেসের আর কোন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্যদের সাথে মাধ্যমের সাহায্যে কথা বলতেন।
আর বামফ্রন্ট রাজ্যের ক্ষমতায় দীর্ঘদিন ছিল। কিন্তু বামফ্রন্টের পলিটব্যুরোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সাথে আগাম সময় নিয়ে রাখা হত। তারপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কথা বলতেন।

কিন্তু বিপ্লব কুমার দেব তিনি প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। দিল্লীতে এক দিনে অনেক মন্ত্রীর সাথে রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারতেন। উনার ব্যাক্তি পরিচয়ের মাধ্যমে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য বহু প্রকল্পের অনুমোদন করিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এই সুযোগ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ও পাবেন না। বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেয়াতে রাজ্যের কি ক্ষতি হয়েছে।তা রাজ্যবাসী সময়ে বুঝতে পারবেন। দেশের কোন প্রধান মন্ত্রী বা সরকার ত্রিপুরা নিয়ে রাজ্যের ঊন্নয়ন নিয়ে ভেবেছে ? বর্তমান সরকারের আমলে রাজ্যের ঊন্নয়ন পেছনে প্রধানমন্ত্রী এবং বিপ্লব দেবের অবদান রয়েছে।

দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা রদবদল করবেন। সেই সময় রাজ্যের একমাত্র প্রথম মহিলা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে প্রতিমা ভৌমিক কে সরিয়ে দেয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই শুন্য পদে রাজ্য থেকে বিপ্লব কুমার দেব অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।শ্রীদেব দিল্লীর পরিচিত লবি এবং হরিয়ানা রাজ্যের দলের নেতৃবৃন্দের প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি নাড্ডাজির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। হরিয়ানা রাজ্যের দলের নেতৃবৃন্দের কথা দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি বাদ দিতে একবার হলেও চিন্তা করবেন। হরিয়ানা রাজ্য দেশের মধ্যে আলোচনা মত স্থানে রয়েছে। ত্রিপুরা সেই জায়গায় কখনো যেতে পারবে না। সম্প্রতি হরিয়ানা রাজ্যের দলের সকল নেতৃবৃন্দের রাজ্য সফরের পেছনে রহস্য লুকায়িত আছে।
অন্যদিকে শ্রীমতী ভৌমিক কে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল মুখ্যমন্ত্রী পদে কাউকে প্রজেক্ট করবেনা বলে অভিমত।

বনমালী পুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিপ্লব কুমার দেবের পরির্বতে নীতি দেব প্রার্থী হতে পারেন। শ্রীমতী দেব প্রার্থী হন । সেই ক্ষেত্রে রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য বিরোধ করার সুযোগ নেই।কারন শ্রীভট্টাচায্য সভাপতি পদে আসার পেছনে বিপ্লব কুমার দেবের অবদান রয়েছে।শ্রীদেবের সুপারিশ ছাড়া সভাপতি হবার সুযোগ ছিল না।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী চয়ন করার পেছনে রাজীব, বিপ্লব, প্রতিমা এবং যীষ্ণু এদের ভূমিকা বেশী থাকবে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। দলের ভেতরে এবং বাইরে এত সমালোচনা পরেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এদের পরামর্শকে মূল্যায়ন করেছেন। তারপর পর ও সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে শেষ কি হয় দেখতে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।