হাবেলী প্রতিবেদন। আগষ্ট।
আগরতলা।
শান্তিকালী আশ্রমের নবনির্মিত ভবনের দারোদ্ঘাটন করেন রাষ্ট্রিয় স্বয়ং সেবক সংঘের পরম পূজনীয় সরসংঘচালক ড: মোহন ভাগবতজী। সাথে ছিলেন শান্তীকালী চিত্তমহারাজ। এছাড়া ও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেবর্বমা, রামপদ জমাতিয়া শিপ্ল বানিজ্য মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক এবং সংসদ সদস্য রেবতী ত্রিপুরা।
শান্তিকালী উৎপত্তি ইতিহাস:-
___
আজ থেকে ৬২ আগে খঞ্জনা দেবীর গর্ভে জন্মেছিলেন , জন্মসিদ্ধ সাধক স্বধর্ম রক্ষক ও সমাজ সংস্কারক শান্তি ত্রিপুরা তথা শান্তিকালী মহারাজ।১৯৬০ সালের ১৩ জুন। ১৩ তম সন্তান মায়ের। পিতা ধনঞ্জয় ত্রিপুরা। জন্মস্থান দক্ষিণ জেলার মনু বাজারের ফুলছড়ি পাড়া।ত্রিপুরী সম্প্রদায়ভূক্ত আদিবাসী।জুমিয়া পরিবার।
শান্তি ত্রিপুরা ছোট বয়সে আধ্যাতিক পথে হিন্দু সাধকের ভূমিকায় জনজাতির মধ্যে কাজ করতে শুরু করেন।অল্প বয়সে গৃহত্যাগ করে ভারতের বিভিন্ন তিরথস্বান পরিভ্রমনে বেরিয়ে পড়েন।স্বধর্ম রক্ষায় তিনি কাজ করতে শুরু করেন। অন্যান্য দের সাথে উনার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যেত না। তিনি পৃথক প্রকৃতির ছিলেন।
জন্মসিদ্ধ সাধক শান্তিকালি মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৭৪ সালে তুইকম্বাবাড়িতে গড়ে তোলেন আশ্রম। সেখান থেকে ই শুরু হয় আশ্রমজীবন। সেখানে রাধাকৃষ্ণের বিগ্ৰহ এবং ত্রিপুরা সুন্দরী মায়ের আর্শিবাদ নিয়ে এই কাজ শুরু করেন। তীর্থস্থান ভ্রমণ শেষে রাজ্যে ফিরে এসে একাজে হাত দেন।
১৯৭৯ সালে দেবী দক্ষিণাকালী কে প্রতিষ্টা করেন সাব্রুমের মনুঘাট দ্বাদশ শ্রেনী স্কুলে পাশে গড়ে তোলেন।শিবচতুরদশী শুভ দিনে সূচনা করেন।
সাধক শান্তিকালি বলেছিলেন ” কলির মানুষের মধ্যে সাধক কম।বিশ্বাস এবং ভক্তি কম থাকার কারণে ই ত্রিপুরার মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটছে ।”
১৯৮৮ সালে পাদুমবড়বাড়িতে
মা আদ্যাশক্তি ও মা দক্ষিণাকালী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
সিধাই মোহনপুর ব্লকের বড়কাঁঠাল পাড়াতে ১৯৮৯ সালে মা সিদ্ধেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই আশ্রমে ২০১০সালে একটি উপজাতি ছাত্রাবাস গড়ে তোলেন।১২০জন সেখানে থাকে। এছাড়া সেবামূলক কাজ চলছে।
১৯৮৯সালে বিশ্বহিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক সভায় শান্তিকালী মহারাজ আমন্ত্রিত হন। কেন্দ্রীয় বৌদ্ধিক মন্ডলীর সদস্য ছিলেন।অল্প বয়সেই অনুভব করলেন যে সনাতনী জনজাতি সমাজ বিভিন্ন ভাবে প্রলোভনে পড়ে নিজেদের উৎস ও ইতিহাস ভূলে গিয়ে পথভ্রষ্ট ও ধর্মান্তরিত হচ্ছে। উপজাতি সমাজ কে রক্ষা করার জন্য শান্তিকালী মহারাজ ত্রিপুরা জুড়ে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন।
তার পাশে চাচু বাজারে কাছে শান্তিকালী সেবাশ্রম গড়ে তোলেন। এখানে মাভদ্রকালী কে প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৪ সালে জিরানীয়ার কাছে দেবতাবাড়িতে শ্রীশ্রীশান্তীকালী আশ্রম শুরু হয়।এই আশ্রমে পঞ্চ দেবদেবীর তথা মাতা ষোড়শী ত্রিপুরা সুন্দরী ,মাতা মহালক্ষু, মাতা মহা সরস্বতী ,শ্রীশ্রী বীষ্ণু এবং শ্রীশ্রী মহাদেব পুজো করা হয়।
১৯৯৪ সালে মহারাজা ঠিক করেন উত্তর ত্রিপুরার জনজাতি সমাজের পবিত্র পাহাড় তাকে তারা হাপুং রাজা সেখানে গিয়ে তিনি শিবমন্দির স্থাপন করেছেন।
মেলাঘর থেকে দূরে দক্ষিণে চন্দূলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আশ্রম। এখানে মাতা ভুবণেশ্বরী।
জিরানীয়াবাজার থেকে প্রায় ১৬কি মি উত্তরে মান্দাই কাছে বুড়াখাতে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে শ্রীশ্রী মা জগদ্ধাত্রী। এখানে ও একটি ছাত্রাবাস গড়ে তোলা হয়।
শান্তীবাজারের কাছে শ্রীশ্রী বগলাদেবী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০০সালে ২৭আগষ্ট (আজকের দিনে) শান্তিকালীকে জিরানীয়া দেবতাবাড়ি মন্দীরের ভেতরে রাতে উগ্ৰপন্ত্রী বন্দুক নিয়ে শিষ্য মত করে উনার কাছে গিয়ে তাকে প্রণাম করেন। তিনি ভেবে ছিলেন এরা শিষ্য।সহজ মনে তাদের কাছে ছীলেন।উগ্ৰপন্ত্রীরা রাতের আঁধারে একেবারে কাছে থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়তে থাকে।গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হামলাকারীরা রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে আসপাসের সহায়তায় আশ্রম আবাসিকগন তাকে জিরানীয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসকগন দেখছেন রক্ত ঝড়ে পড়ছে।বন্ধ করা যাচ্ছেনা। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।তখন শান্তিকালীকে জি বি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিয়ে আসার পর বহু চেষ্টা করেও সেদিন উনাকে রক্ষা করতে পারে নি।
সেদিন রাতের আঁধারে শান্তি কালীকে উগ্ৰবাদীগন তাকে হত্যা করেছে। কিন্তু উনার কাজকে বন্ধ করতে পারে নি।আজ ও উনার পেলে যাওয়া যোগ্য শিষ্য চিত্র দেবরমা চিত্তশান্তিকালী এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
শান্তি কালীকে হত্যার পরে প্রথম ২০০১ সালে শান্তিবাজারের কাছে কোয়াংফাংএ স্বামী চিত্তমহারাজ গুরুর নামে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে দেবী কৈশিকী মাতা কে পূজা করা হয়।
খোয়াই মহকুমার পদ্মবিলের নীলচন্দ্র পাড়াতে ২০০৩ সালে আশ্রম গড়ে তোলা হয়। সেখানে ভগবান শিব।এই মহকুমার চাম্পাহাওর থানা এলাকায় রবিচরণ চৌধুরী পাড়াতে রক্ষাকালী,কল্যাণপুরের প্রমোদনগর মহাদেব এবং গজেন্দ্রপাড়াতে ত্রিপুরেশ্বরী মাতা মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে।
সাব্রুমের ছনখোল ২০০৪সালে , তেলিয়ামুড়ার মহারানী পুরে ২০০৪ সালে, মান্দাই কাছে পাটনীতে ২০১০সালে , হ্রষ্ মুখে র বথোয়াপাড়াতে শান্তিকালী আশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে।
এছাড়া মান্দাই এর কাছে আশিঘরে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে শ্রীশ্রী জগন্নাথ,বলভদ্র এবং দেবী সুভদ্রার পূজা করা হয়। এখানে প্রতিবছর রথযাত্রা উৎসব পালিত করা হয়। চম্পকনগর কাছে চিন্তারাম কোবরা পাড়ার একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই আশ্রমে মহাকালীরূপী মাতা ত্রিপুরেশ্বরী, মহালক্ষ্মী,মহা সরস্বতী । এছাড়া রয়েছে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের বিগ্ৰহ, শিবলিঙ্গ রূপী মহাদেব।
অমরপুরের কাছে সরবং এ শান্তিকালী আশ্রম গড়ে তোলা হয়। এই আশ্রমে শ্রীশ্রীমাতঙ্গিনী এবং শ্রীশ্রী মা ধূমাবতী স্থাপিত করা হয়।গড়ে তোলা হয়েছে ছাত্রাবাস।আজ এই মন্দ্রিরের দারোদ্ঘাটন করা হয়।