হাবেলী প্রতিবেদন। আগরতলা।২৩ আগষ্ট।।
আজ হংসকুমার ত্রিপুরা নেতৃত্বে ৬ হাজার অধিক ভোটার ভারতীয় জনতা পার্টি ত্যাগ করে তিপরা মথা দলে যোগ দান ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাল শুরু। মথার চেয়ারম্যান প্রদ্যুৎ কিশোর মানিক্য দেবর্বমা দলত্যাগীদের তিপরা মথা দলের পতাকা হাতে তুলে দিয়ে বরণ করে নেন।
ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের বি জে পি বিরোধী দলের আসনে ছিল। হংসকুমার ত্রিপুরা বিরোধী দল নেতা ছিলেন। তিনি ৫ নং আসন ছামনু কেন্দ্র থেকে এ ডি সি নির্বাচনে লড়াই করে মোট ১২০৩৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে ছিলেন।
তিনি উনার প্রতিদ্বন্দ্বী দের চেয়ে ৫৮২০ বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ৪৮.৯৩ শতাংশ ভোট তিনি পেয়েছিলেন।
বি জে পি শ্রীত্রিপুরাকে বিরোধী দল নেতা পদে বসিয়ে ছিলেন। তিনি বি জে পি র কাজ কর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি প্রাক্তনমুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব বাবুর কাছের লোক ছিলেন। দলের অনেকেই সেসময় হংসবাবুকে বিরোধী দল নেতা পদে বসাতে রাজি ছিলেন না বলে সংবাদ।সংবাদ সুত্রে জানাগেছে শ্রীত্রিপুরা অনেক দিন আগে থেকেই দল ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিষয়টি রাজ্য বিজেপি অনেক নেতৃত্ব গোচরে ছিল। কিন্তু কেউ তাকে দলে রেখে দেওয়ার বিষয়ে আগ্ৰহ প্রকাশ করে নি বলে সংবাদ।
অন্যদিকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে রাজ্যপাল মনোনীত সদস্য বিদ্যুৎ দেবর্বমা মাধ্যমে তিপরা মথা দলের সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর মানিক্য দেবর্বমা দলত্যাগের বিষয়ে তৎদীর করা হয়।
অপরদিকে গত শুক্রবার দুপুরে হংসকুমার বাবু বিরোধী দল নেতা অফিসে বসে পদত্যাগ পত্র তৈরি করেন মনোনীত সদস্য বিদ্যুৎবাবুর উপস্থিতিতে । সেদিন ই তিনি পদত্যাগ পত্র এ ডি সি র চেয়ারম্যান জগদীশ দেবর্বমা কাছে জমা দিয়ে ছামনু বাড়িতে চলে গেছেন।
আজ ছামনুতে তিপরা মথা দলের দলত্যাগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সভায় দলের সুপ্রীম ও প্রদ্যুৎ কিশোর মানিক্য দেবর্বমা ,এ ডি সি চেয়ারম্যান জগদীশ দেবর্বমা , মুখ্যনির্বাহী সদস্য পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়া, ডেপুটি সি ই এম অনিমেষ দেবর্বমা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজ দলত্যাগ অনুষ্ঠানে হংসকুমার ত্রিপুরা নেতৃত্বে সাড়ে তিন হাজার পরিবারের প্রায় ৬ হাজার অধিক ভোটার বি জে পি ,আই পি এফ টি এবংসি পি আই এম ত্যাগ করে তিপরা মথা দলে যোগ দান করেছেন।
জনজাতিদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগন বৃহৎ তিপরাল্যান্ডের দাবি আদায় করতে মহারাজার হাতকে শক্তিশালী করতে সকলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দলত্যাগ অনুষ্ঠানে মথার চেয়ারম্যান প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা বলেন ৭৫বছর যাবৎ রাজ্যের ১১ লাখ জনজাতিদের শুধু বঞ্চনা করেছে সব রাজনৈতিক দল। আর নয় । অনেক হয়েছে। এখন আমাদের পাওনা আমাদের বুঝে নেয়ার সময় হয়েছে। জনজাতিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন গ্ৰেটার তিপরাল্যান্ড চাই।ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া গ্ৰেটার তিপরাল্যান্ড গঠন অসম্ভব।
আরো বলেন আমি সকল জনজাতির উন্নয়ন করতে চাই। আমি একার জন্য কিছু করতে চাই না।
মিজোরাম থেকে আগত রিয়াং শরনার্থীগন আমার চেষ্টায় রাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছে। দীর্ঘ বছর রিয়াং শরনার্থীগন চরম অবহেলা মধ্যে দিন যাপন করতে বাধ্য হয়। রাজ্যের সব কয়টি রাজনৈতিক দলের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।
প্রাক্তন বিরোধী দল নেতা হংসকুমার ত্রিপুরা জনসভায় বলেন এ ডি সি তে ক্ষমতায় আসার পর জনজাতি জনগনের উন্নয়নে একটি কাজ ও করা সম্ভব হয় নি। যখন উন্নয়ন মূলক কাজ করতে বলেছি ,তখন বলা হয় আপনি এম ডি সি ।ভাতা পাচ্ছেন। কাজ করতে হবে না।
বি জে পি বলে সব কা সাথ সব কা বিকাশ।তা মোটেও ঠিক নয়। জনজাতিদের উন্নয়নে বি জে পি কোন কাজ করতে রাজি নয়।অথচ বি জে পি দলের এম এল এ শম্ভুবাবু সহ অনেক আগরতলা শহরে বিশাল বিশাল বাড়ি তৈরি করছেন।তা উনারা কি ভাবে করেছেন। তিনি বলেন ছামনু বিধানসভা কেন্দ্র আগামী দিনে তিপরা মথা দল দখল করবে।ছামনু বিধানসভা কেন্দ্র থেকে রাজ্যব্যাপি বি জে পি বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করে তোলার আহ্বান জানান।
প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে হংসবাবুকে এ ডি সি পরিচালন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এখন ও একটি পদ শূন্য রয়েছে। সেই শূন্য স্থানে হংসবাবুকে স্থান দেয়া হতে পারে। উল্লেখ্য এই পদে দলের চীফ হুইপ রবীন্দ্র দেবর্বমা কে দেয়ার একবার তোরজোর হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা চাপা পড়ে যায়।
শোনা যাচ্ছে পরবর্তীতে পদ্মলোচন সহ আরো একজন এম ডি সি বি জে পি ত্যাগ করে তিপরা মথা দলে দলে যেতে পা বাড়িয়ে রেখেছে বলে সংবাদ।
বি জে পি বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিল মথার এম ডি সি কে ভেঙ্গে নিয়ে আসার। কিন্তু মথার চালে বি জে পির পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত বি জে পি সকল এম ডি সি কে রাখতে পারেন কিনা তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
এ ডি সি তে দল বিরোধী আইন কার্যকরি হয় না।ফলে
হংসবাবু একা মথাতে যোগদান করাতে উনার সদস্যপদ খারিজ হবে না।
হংসবাবু উপজাতি যুব সমিতি করতেন।শ্যামাচরণ ত্রিপুরার শিষ্য। তিনি বর্তমান বি জে পি অনেক নেতা থেকে পাহাড়ের রাজনীতি ভালো বুঝতে পারেন বলে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। সময়ে বলবে তিনি কি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা।
আগামী ২৬ আগষ্ট ভারতীয় জনতা পার্টির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা দুই দিনের রাজ্য সফরে আসছেন। এ ডি সি সদর দপ্তরে ভিলেজ কমিটি নির্বাচন কে সামনে রেখে জনজাতিদের এক জনসমাবেশের আয়োজন করেছে।আর এই সময়ে বিরোধী দল নেতা দলত্যাগ বি জে পি কে বিপাকে ফেলবে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। ঐদিন বি জে পি ডাকে জনজাতি অংশের জনগন কতটুকু সাড়া দেন তাই এখন দেখার বিষয়।