রাজ্য বিজেপি তে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব অব্যাহত : বাড়চ্ছে ক্ষোভ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নীরব

হাবেলী প্রতিবেদন। আগরতলা।২৭ জুলাই।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন কে সামনে রেখে ভারতীয় জনতা পার্টির সা্ংগঠনিক শক্তিশালী করতে দুই দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক রাজ্য সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংগঠন বি,এল সন্তোষ , রাজ্যের প্রভারী বিনোদ সোনকর, সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক ফনীন্দ্র নাথশর্মা , কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক এবং রাজ্য কমিটির সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজ্য কমিটির সদস্য সদ্যস্যা সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠন কর্তকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।

অফিস বেয়ারার —

সন্তোষ জী রাজ্য কমিটির কার্যকরি কমিটির সদস্য সদ্যস্যাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। তিনি রাজ্যের কাজকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। সামনে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ পরিচালিত ভিলেজ কমিটি নির্বাচন আগামী নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে মধ্যে করতে হবে। বর্তমান শাসক দল বি জে পি ভিলেজ কমিটি নির্বাচনে লড়াই করতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাচন লড়াই করতে নির্দেশ

দিবেন।

এ ডি সি এলাকায় ভারতীয় জনতা পার্টি ৫৮৭ টি ভিলেজ কমিটি সব কয়টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারবেন।

সব ওয়ার্ড এ শেষ পর্যন্ত বি জে পি প্রার্থী দিয়ে রাখতে পারবে কি ? মথা ভিলেজ নির্বাচনে প্রানপন লড়ে যাবে।

রাজ্যসভা প্রার্থী

——–

একমাত্র রাজ্য সভার আসন এখন শূন্য পড়ে রয়েছে। রাজ্য থেকে একজনকে দল প্রার্থী করতে হবে। কাকে প্রার্থী করা হবে। এখনও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে নি। শোনা যাচ্ছে এই আসনে যেতে মুখিয়ে আছে চিকিৎসক, এডভোকেট এবং নবাগত সাংবাদিক।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়ক বাদ যাচ্ছেন

——-

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দল বর্তমান বিধায়কদের অনেককে টিকেট দিবে না।

নতুন তুর্কি যুবক এবং আর এস এস ঘরানায় তৈরি করা হয়েছে। এদের প্রাধান্য দিবে দল। বিশেষ ক্ষেত্রছাড়া বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করবে না প্রার্থীর। যোগ্যতা স্নাতক।সব ক্ষেত্রের কাজের সাথে অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের অগ্ৰাধিকার দেয়া হবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে দল কংগ্রেস এবং সি পি আই এম থেকে আগতদের প্রার্থী করেছিল । এখন রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে বি জে পির নেতৃত্বে মিলিজুলি সরকার। বিভিন্ন বিধায়কদের নামে দুর্নীতি সহ পক্ষপাতী তের অভিযোগ উঠে। তারপরও দল তা না দেখার অভিনয় করে সমঝোতার সাথে চলতে আগ্ৰহী।আগামী নির্বাচনে এই সুযোগ আর থাকবে না।

পা বাড়িয়ে

————–+

বর্তমান বিধায়ক যারা আগামীতে পুনরায় টিকেট পাবেন না বলে জেনেছেন।ওরা রাজ্য নেতৃত্বের সব গোষ্ঠী র সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে মরিয়া। আবার পরবর্তি পরিস্থিতিতে কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস গিয়ে টিকেট বাগিয়ে নিতে পারেন।সে লক্ষ্যে এরা যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে বলে সংবাদ। রাজনীতি তে শত্রু মিত্র বলতে কিছু নেই। সকলেই সুযোগ সন্ধানী।

আগামী অক্টোবর পর থেকে রাজ্য বি জে পিতে আরও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাতিল প্রার্থীগন পুনরায় টিকেট পাওয়া র জন্য জোরদার তৎদীর শুরু করবে।

কিছু বয়স্ক বিধায়ক রয়েছেন।এরা দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। জনগনের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে।এরা বি জে পি ত্যাগ করে অন্য দলে গিয়ে পুনরায় বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেন। তাতে শাসকদলের ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজ্য সভাপতি পরিবর্তন

————-

২০১৮ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি রাজ্য সভাপতি পদ নিয়ে দলের অন্দরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে।রাজ্য সভাপতি পদে রামপ্রসাদ পাল বেশি ভোট পেয়েছিল। তিনি ই সভাপতি হন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে রামপ্রসাদ কে সহ-সভাপতি পদে বসিয়ে দেয়া হয়। সভাপতি করা হয় বিপ্লব কুমার দেবকে। সেই দিন থেকে দলের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব তীব্র হতে থাকে।

পরবর্তীতে ডাক্তার মানিক সাহা কে তুলে এনে সভাপতি পদে বসানো হয়।

সংবাদ সূত্রে জানা গেছে কংগ্রেস দলের একমাত্র সদস্য ।তিনি ছিলেন দোশরা অক্টোবর কমিটি রাজ্য নেতা ।

উনার বাড়ি উদয়পুর। রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বাড়িও উদয়পুর। ওরা এক ই এলাকার বাল্যবন্ধু। জনৈক সাহা বাবুর সাথে হ্রদতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডাক্তারবাবুকে সভাপতি পদে বসানো হয়।

শুধু কি তাই। জনৈক সাহা বাবুর পরামর্শ‌ ক্রমে উনার আত্মীয় কে বিধানসভা র অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়েছে।

এই বিষয় গুলো রাজ্যের দায়িত্ব প্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে বারবার জানানো হয়েছে একটি গোষ্ঠী থেকে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নীরব ছিলেন। এতে করে দলের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব বেড়েছে। নীচুতলার সংগঠন অনেক বিধানসভা কেন্দ্রে তলানিতে ঠেকেছে।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ন সময়ের একজন রাজ্য সভাপতি দরকার। মুখ্যমন্ত্রী এবং সভাপতি এক ই ব্যক্তি হলে সংগঠন এবং সরকার পরিচালনা সঠিক ভাবে করা সম্ভব নয় । বৃদ্ধি পাবে কর্মী মহলে তীব্র ক্ষোভ।

নতুন বনাম পুরানো

——

সভাপতি পদে পুরানো অভিজ্ঞ নিস্কলঙ্ক ব্যক্তিকে সভাপতি পদে বসানো হয়। তিনি দলের সংবিধান মোতাবেক রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে থাকেন।

সেক্ষেত্রে নুতন বি জে পি গন তা মেনে নিবে না।

কারণ ২০১৮ সালের কিছু দিন আগে এবং ক্ষমতায় আসার পর যারা বি জে পি। তাদের অধিকাংশের লক্ষ আখেড়ে গোছাতে ব্যস্ত। রাজ্যের জনগন তা অনুধাবন করতে পেরেছেন। জনগনকে যারা অন্ধকারে রেখে ছিল। এখন বুঝতে পারছেন জনগন মোটেও বোকো নয়।

নির্বাচনের আগে সভাপতি নাম ঘোষণা করা হয়। তখন তিনি নিজ ক্ষমতা বলে রাজ্য কমিটি পুনর্গঠন করবেন। এখন যারা রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন। ওরা বাদ যেতে পারেন। পুনর্গঠন করা হবে জেলা, মন্ডল, এবং বিভিন্ন শাখা সংগঠন।

সামনে নির্বাচন।তাই সকলে চাইবেন রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেতে।

নির্বাচন পরিচালন কমিটি, কোর কমিটি, ফিনান্স সহ বিভিন্ন রাজ্য সভাপতি নিজের মত করে গঠন করে দল পরিচালনা করতে চাইবেন।

যারা কমিটিতে জায়গা পাবে না। ওরা শুরু করবে কাঠি বাজি।

এখন দেখার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাকে সভাপতি পদে বসান। রামপ্রসাদ পাল উনার রাস্তা উনি বন্ধ করেছেন।তাপস ভট্টাচার্য কে নতুন গোষ্ঠীর অনেকেই চাইবেন না। এখন দেখার দল কাকে এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রাজ্যে দায়িত্ব তুলে দেন।

বুথ কমিটি পুনঃজীবিত

———-+.

ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্য নেতৃত্ব গন বুথ কমিটি সভাপতি সহ অন্যান্য সদস্যদের বেমালুম ভুলে গেছিল। কিছু কিছু বুথ প্রেসিডেন্ট কাজ করছে।বুথ কমিটি কে বসিয়ে এলাকায় এলাকায় মন্ডল কমিটি নিজেদের মত কাজ করেছে।

সাড়ে চার বছরে বুথ প্রেসিডেন্ট কোন ধরনের সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। চরম দুরবস্থার মধ্যে এরা তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করছেন। নানান কারণে অধিকাংশ বুথ প্রেসিডেন্ট প্রচন্ড ক্ষুব্ধ।

এছাড়া বুথ প্রেসিডেন্ট ২০১৮ সালে প্রতিটি বাড়িতে ছুটে গিয়ে মানুষের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ক্ষমতায় আসার পর বুথ প্রেসিডেন্ট কারো বাড়ীতে যেতে রাজী নয়।ওল্টো মানুষ বুথ প্রেসিডেন্টের কাছে বিভিন্ন কাজের জন্য ছুটে যেতে হয়।

অনেক বুথ প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করার মত পরিস্থিতিতে নেই। নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।একাংশ বুথ প্রেসিডেন্ট বিরোধী শিবিরের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে অভিযোগ। শাসকদলের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে সে ভোট দিতে পারবে না।তাই বুথ প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিতে রাজি নয়।

আগামী ছয় মাসের মধ্যে বুথ প্রেসিডেন্ট সহ নতুন কমিটি গঠন না করা হলে ২০১৮সালের সি পি আই এম মত বি জে পি গর্তে পড়তে পারে।

২০১৮ সালে বুথ প্রেসিডেন্ট হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের কাছ থেকে ছেলে বা মেয়ে চাকরি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বি জে পি র কাজ করেছিল। কিন্তু এখানে এসে দেখতে পেল চাকরি সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ওরা বি জে পি নাম শুনতেই পারে না।

বেকারদের চাকরি

———–

বিভিন্ন দপ্তরে শুন্যপদ পূরণের জন্য সরকারি প্রচার যন্ত্র সচল ।আজ পর্যন্ত টেট উত্তীর্ণ দের সাথে তালবাহালা করে চলছে রাজ্য সরকার।

অন্যদিকে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির এখনও খবর নেই। এছাড়া অন্যান্য দপ্তরের শুন্যপদ পূরণের কোনো উদ্যোগ ই। বাড়ছে বেকারদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ।

কর্মচারী ডি এ

———-

সরকার এখন পর্যন্ত ৩% ডি এ কর্মচারীদের দিয়েছে।সাড়ে চার বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিন বাড়ছে। সরকার ডি এ দেয়ার বিষয়ে চুপ।

কর্মচারী সংগঠন

————-

বি জে পি নিজস্ব কর্মচারী সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘ। কিন্তু রাজ্যে বি জে পি নিজেদের মত করে কর্মচারী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এই সংগঠনের কর্মচারী গন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে আচরণ করতে চিন্তা করবে না বলে কর্মচারী সংগঠন সাথে যুক্ত অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

মুখ্যমন্ত্রী বনাম মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতার লড়াই

———–

রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী তথা ভারতীয় জনতা দলের সভাপতি ডাক্তার মানিক সাহা সাথে প্রাক্তন সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছে।

দলের সংবিধান মোতাবেক একজন সভাপতি ক্ষমতা চ্যুত হয়। তখন উনার সেই পদমর্যাদা থাকে না।

প্রশাসনিক কাজে র ক্ষেত্রেও তাই। মুখ্যমন্ত্রী পদ চলে যাবার পর তিনি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন না।

গত দুই দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে এক ই পদ মর্যাদায় শ্রীদেব বসেছেন। তিনি এখন রাজ্য কমিটির একজন আমন্ত্রিত সদস্য পদ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ত্ব। দলের অন্ধরে এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তিনি কিভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে এক সাথে এক আসনে বসলেন। এখন এই আসনে দলের সহ-সভাপতি বসতে পারেন। তিনি তো একজন সাধারণ জনপ্রতিনিধি। অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে উনার পদমর্যাদা বেশি নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সবকিছু জানার পর ও তাকে কেন বারবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্ৰাধিকার দেয়া হয়। এই দলের অন্ধরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ সদস্যগন ভবিষ্যতের লাভালাভের জন্য কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নয়।

দলের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকার অভিযোগ উঠেছে। একজন মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচারে অগ্ৰাধিকার দেয়া হয়। তিনি এখন একজন বিধায়ক মাত্র। এই নিয়ে দলের প্রাক্তন সভাপতি প্রকাশ্যে উনার রাগ উগ্ৰে দিয়েছে ন ।

সেই তুলনায় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা প্রচারে অনেক পেছনে বলে অভিযোগ।

আই পি এফ টি সম্পর্কে

———–+

পাহাড়ে ২০১৮ সালের পরিস্থিতিতে আই পি এফ টি এখন নেই।বি জে পি জোট ভঙ্গ করে এককভাবে পাহাড়ে লড়াই করে ।তাতে বি জে পি লাভবান হবে। জোট গঠন করে লড়াই করে তাতে আই পি এফ টি র সাথে বি জে পি ও পাহাড় ছাড়া হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।