শীতের মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশে বনভোজন এবং খুমুলুঙ পার্কের সৌন্দর্য সপরিবারে উপভোগ করুন

খুমুলুঙ পার্ক।খুমুলুঙ ককবরক শব্দ। বাংলা অর্থ ফুলের বাগান। শীতের মৌসুম এখন। বনভোজন মানে পিকনিক। সপরিবারে পিকনিক করতে কোথায় যাবেন। ভাবছেন। ভাববার কিছুই নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সপরিবারে উপভোগ করার মতো আমাদের রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান নেই।খুমুলুঙ নামের সাথে মিল রেখে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। তা দেখে আপনি খুশি তে অভিভুত হয়ে যাবেন।
আগরতলা মোটরস্ট্যান্ড থেকে ম্যাজিক, টাউন বাস , বা যেকোন গাড়িতে জিরানীয়া নতুন এডিসি চৌমুহনী তে নেমে যাবেন। সে নেমে জাতীয় সড়ক বিপরীতে খূমুলুঙ যাবার অটোরিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে। সেখান থেকে অটো রিকশা ধরে ত্রিপুরা গ্ৰামীন ব্যাঙ্কের সামনে নেমে যান। মে জায়গায় আপনি অটোরিকশা থেকে নেমেছেন। তাঁর ঠিক উল্টো দিকে পিচ ঢালাই রাস্তা দিয়ে হেঁটে সোজা পার্কে র সামনে র গেইটে পৌঁছে যাবে না।
আগরতলা থেকে যেকোন গাড়িতে রির্জাভ নিয়ে নিতে পারেন। আগরতলা থেকে খুমুলুঙ দূরত্ব ২১কিলোমিটার হবে।গাড়ি মেতে বড় জোড় সময় লাগবে এক ঘন্টা।আসাম আগরতলা জাতীয় সড়ক কোন যান জট না হলে সময় কম লাগবে।
এছাড়া রির্জাভ গাড়ি আগরতলা থেকে মাধব বাড়ি ট্রাকটার্মিলন্যাল খুমুলুঙ যাবার বিকল্প রাস্তা রয়েছে। সেই পথ ধরে রিজার্ভ গাড়ি যাতায়াত করে। জিরানীয়া এবং মাধববাড়ি দিয়ে খুমুলুঙ যাবার রাস্তা খুবই ভালো । মাধববাড়ি দিয়ে খুমুলুঙ যাবার দূরত্ব কি ছুটা কম। ছুটাগাড়ি করে যেতে আগরতলা থেকে জিরানীয়া পর্যন্ত একজনের ভাড়া পড়বে ২৫টাকা। আবার জিরানীয়া থেকে খুমুলুঙ পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার দূরত্বের একজনের ভাড়া ২০টাকা।খুমুলুঙ থেকে জিরানীয়া পর্যন্ত অটোরিকশা বিকেল চারটা পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তারপরও অটোরিকশা পাওয়া যাবে না। অটোরিকশা ছাড়া এই পথে অন্য যাত্রিবাহি
কোন গাড়ী চলাচল করে না।

পার্কের সামনে খালি মাঠ রয়েছে। সেই মাঠে বেশ কয়েকটি পাকা ঘর রয়েছে। সকালের দিকে আগে যে যাবে। সে গুলো তে
দখলে নিতে পারেন। তাহলে ভালো জাগায় বসে বনভোজন বা পিকনিক করতে পারেন। এছাড়া খালি মাঠ রয়েছে। সবুজ ঘাসের চাদরে ঢাকা ছিল। এদিকে এই পরিবেশ থাকে।বড় দিন থেকে ইং রেজী নববর্ষ হয়ে স্বরসতী পুজো পর্যন্ত বনভোজন আসর বসে বেশি। নতুন অতিথি দের পদ চালনায় সবুজ ঘাসের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বনভোজন পর্ব শেষ হবার পর চৈত্রের দাবদাহে ঘাসগুলো শশ্মান পথে যাত্রা করে। কালবৈশাখীর ঝড় হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ছিটা পড়ে। তখন সবুজ ঘাসের অঙ্কুরিত শুরু হয়। মাঠের চারদিকে রয়েছে সবুজ বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ রয়েছে। মাঠটিতে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্লাস্টিক বোতল,প্লাস্টিকের কাপ, বিভিন্ন প্রজাতির প্লাস্টিকের পেকেট । জায়গা টি পরিস্কার করা হয় না।এক নোঙ্ড়া আবর্জনা র মধ্যে বনভোজন আসর সম্পন্ন করতে হবে।এ ডি সি প্রশাসন পিকনিকের জায়গা টি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কোন উদ্যোগ নেই। তারপরও পিকনিকের জায়গা য় যেতে মাশুল গুনতে হচ্ছে। এই নিয়ে পিকনিক দলের আনন্দ কারী দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পিকনিক দলের আবেদন মাঠটি সূন্দর করে রেখে প্রশাসন মাশুল আদায় করুক।

খুমুলুঙ পার্কের ভেতরে যেতে আপনাকে টিকেট কাটতে হবে।জনপ্রতি ২০টাকা করে। গাড়ি, বাইক পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে।এর জন্য পৃথকভাবে টাকা দিতে হবে। পার্কের ভেতরে প্রবেশ দ্বার খুবই সুন্দর। প্রবেশপত্র দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার মুখে উপজাতি রমনীদ্বয় আপনাকে স্বাগত জানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিবে। বিশাল এলাকা নিয়ে এটি গড়ে তোলা হয়েছে।যদি পায়ে হেঁটে সব জায়গায় যেতে অসুবিধা হয়। তাহলে সেখানে রয়েছে ই রিক্সা ।তাতে টিকেট কেটে উঠে বসুন।এরা এলাকা রিক্সায় ঘুরে দেখতে পারেন।
কিন্তু পায়ে হেঁটে ধীরে ধীরে ঘুরে ঘুরে সব আনন্দ উপভোগ করুন।তার মজাই আলাদা।গেইট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পাবেন।পথের দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফুটে রয়েছে।তার মধ্যে গাঁদা ফুলের বিভিন্ন প্রজাতির। রয়েছে চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, দোপাটি, এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির ফুল।পৃথক গোলাপ ফুল বাগান।তাতে রয়েছে প্রায় ৫০টি প্রজাতির গোলাপ ফুল। একটু এগিয়ে গিয়ে আপনার ডান দিকে জলের ফোয়ারা। এই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পাবেন দোলনা। দোলনা য় দোল খেতে পারেন।

এর থেকে কয়েক কদম এগিয়ে আপনার বাঁদিকে রয়েছে শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা।এই লনে রয়েছে শিশুদের মনোরঞ্জন করার মত বেশকিছু নানান দোলনা । একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে পাবেন রেস্টুরেন্ট । সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে চলে যাবেন নৌকা ঘাটে। নৌকা ভ্রমণ করার আগে সেতু দিয়ে অপর পারে যেতে পারে ন। রয়েছে একটি ঘড়।মা থেকে পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ছবি তুলতে পারবেন। সেখান থেকে ফিরে এসে নৌকা ভ্রমণ করুন। পনেরো মিনিট জলে নৌকা ভ্রমণ করুন। প্রতিজনের জন্য নৌকা ভ্রমণ করতে ২০টাকা করে ঘাটে টিকেট পেয়ে যাবেন । নৌকা ভ্রমণ শেষে আবার চলতে থাকবে ন । সামনে এগিয়ে কিছু সময় যাবার পর ডানদিকে মোড় নিয়ে উপর দিকে রয়েছে। উপজাতি দের টংঘর। সেই টংঘরে বেশকিছু সময় কাটাতে পারেন। সামনে রয়েছে শিশুদের মনোরঞ্জন করার মত দোলনা সহ নানা উপকরণ। শিশুদের সবুজ ঘাসের উপর ছেড়ে দিন
ওরা ওদের মত করে ছোটাছুটি করে খেলতে পারবে।নৌকার ঘাটে জলের পাশে বসে সময় কাটানোর জন্য বসার জন্য ব্যবস্থা আছে। সেখান ও কিছু সময় বসতে পারেন। সেখান থেকে ফিরে এসে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ বাগান । সেই বাগানের মধ্যে রয়েছে হরেক রকমের গোলাপ ফুল।যা দেখতে ইচ্ছে করবে। গাঁদা এবং গোলাপ ফুল বাগান ছেড়ে ফিরে আসতে আপনার ইচ্ছে হবে না। এস্থান ত্যাগ করে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি প্ল্যান চলে যাবেন। আয়ুর্বেদ ঔষধ তৈরি করতে যেসব গাছ লতা পাতা ফুল ফুল দরকার হয় । সেই সব গাছ সচোখে একবার চিনতে পারবেন।এই সব গাছ মানুষের কিধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয় । সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেখান থেকে এইবার সোজা হেঁটে পার্কের সীমান্ত এলাকা ছেড়ে আসতে হবে।যদি মনে করেন আপনার পায়ে হেঁটে সব জায়গায় যেতে অসুবিধা হবে। তাহলে টম টম নিয়ে পার্কে বেড়াতে পারেন।

পার্ক থেকে বের হয়ে সামনে পাবেন খুমুলুঙ এক্সপ্রেস ট্রেন। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে‌ ২০ টাকা। ট্রেনে চড়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কৃষি ভবন হয়ে খুমুলুঙ বাজার উপর দিয়ে ফরেষ্ট চৌমুহনী অতিক্রম করে হেড অফিসে র সামনে দিয়ে ষ্টেডিয়াম পর্যন্ত যাবে। সেখান থেকে পুনরায় ঘুরে কাউন্সিল ভবনের সামনে দিয়ে গ্ৰামীনব্যাঙ্ক হয়ে আবার পার্কের সামনে এসে দাড়িয়ে যাবে। ট্রেন থেকে নেমে দেখবেন স্থানীয় মহিলা উপজাতি দের তৈরি পিঠা, বাংগ ই,কুলবরি, তেঁতুল, চালতা, শশা,পাপড়, চানাচুর সহ নানা ন মুখরোচক খাবার নিয়ে বসে আছে।
এই পায়ে হেঁটে এ ডি সি সদর দপ্তর , কাউন্সিল ভবন, জনজাতিদের মিউজিক কলেজ হয়ে মিউজিয়ামে যেতে পারেন। সেখানে দেখতে পাবেন রাজ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়দের প্রতিকৃতি। এছাড়া উপজাতি দের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী রয়েছে। এবার সেখান থেকে খুমুলুঙ ষ্টেডিয়াম ।এর উল্টো দিকে উপজাতি গ্ৰন্থাগার।, বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়দের জীবন শৈলী, সামাজিক, আর্থিক সহ নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন। তাহলে উপজাতি গ্ৰন্থাগারে যেতে পারেন। সরকারি ছুটির দিন গ্ৰন্থাগার বন্ধ থাকে।
গ্ৰন্থাগারের পাশে এবং খুমুলুঙ স্কুলে সামনে খাবার হোটেল রয়েছে।খুমুলুঙ স্কুলে র সামনে হোটেল গুলোতে ভালো খাবার পাওয়া যায়। এখানে একটি হোটেলে নির্ভেজাল খাবার পাবেন।দাম একটু বেশি নিবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রয়েছে হোটেল টিতে।এইসব হোটেল গুলোতে আপনি উপজাতি দের নানান খাবার পাওয়া যায়।
যদি মনে করেন গেষ্ট হাউসে থেকে খুমুলুঙ ঘুরবেন।স্বলমূল্যে গেষ্টহাউস এ ডি সি সদরে আগাম যোগাযোগ করে নেন তাহলে ভালো হবে। রাত্রিবাস করতে পারেন।কোন অসুবিধা নেই। তবে খাবার পরিবেশন করা হয় না। খাবার হোটেল নয় তো সেখানে রান্না করে দেওয়ার জন্য লোক আছে। ওরা রান্না করে দিবে। বৈদ্যুতিক আলো দিয়ে
মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর প্রতিকৃতি সাজানো হয়েছে। রাতে এই প্রতিকৃতি লাইটের আলোতে খুব ই সুন্দর দেখায়।
উল্লেখ্য ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ সদর দপ্তর এখানে গড়ে তোলা হয় ১৯৯৩ সালে। সদর দপ্তর গড়ে উঠায় লালমাটির পাহাড় সকলকে সেখানে যেতে প্রতিদিন হাত ছানি দিচ্ছে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।