হাবেলী প্রতিবেদন। আগরতলা। ২৬ জূলাই।।
আজ কের পূজা। আগরতলায় অবস্থিত মহারাজার রাজ বাড়িতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পূজা করা হয়। বাঁশের মাধ্যমে কের পূজার প্রতীক মূর্তি তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট কোন প্রতীক মূর্তি নেই। এই লোকিক মূর্তির সামনে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে দেশের জনগণের মঙ্গলার্থে প্রতি বছর পূজো করে আসছে। শনিবার বা মঙ্গ
লবার পূজো আয়োজন করা হয়। জনজাতি পুরোহিত চন্তাই পুজো করেন। উনাকে পুজোতে সহযোগিতা করেন অচাই,বারুয়া, এবং গালিম।
শোনা যায় ত্রিপুরার মহারাজার আমলে সাগরদ্বীপ থেকে সংসার ত্যাগী যোগী পুরুষদের এখানে নিয়ে আসেন। এরাই হলেন পুরোহিত তথা চন্তাই।
মহারাজার আমলে কের পূজার আগের দিন চন্তাই পুজো র জন্য আগাম অনুমতি চেয়ে রাজার কাছে আবেদন করতেন।রাজা যখন চন্তাই কে পুজো র জন্য অনুমতি দিতেন। সেদিন থেকে রাজার ক্ষমতা আড়াই দিনের জন্য চন্তাই হাতে চলে যেত।রাজা তখন চন্তাই আদেশ মানতে বাধ্য থাকতেন।
কের পূজার সাতদিন আগে চতুর্দশ দেবতার বাড়িতে খারচি পূজা হয়। সেই পূজার আসর থেকে ১৪ টি বাঁশে র আগা কের পূজার সময় ব্যবহার করা হয়। সেই বাঁশ খন্ড কের পূজার সময় কের মূর্তির সাথে মাটিতে পূতে রাখা হয়।খারচি পূজাতে চন্তাই যেমন গোপনীয়তা রক্ষা করেন।কের পূজার সময় ও চন্তাই কিছু জিনিস গোপনীয়তা বজায় রাখেন। খারচির সাথে কের পূজার সম্পর্ক থাকতে পারে।
প্রাচীন কাল থেকেই হিন্দুরা দেবদেবীর মূর্তি পূজা করে আসছে। সেই রকম জনজাতি অংশের জনগন লোকিক দেবদেবীর পূজা করে আসছেন।লোকিক পূজার মধ্য দিয়ে তাদের দেবদেবীর সন্তোষ্ট করার প্রয়াস জারি ছিল।
আগে গ্ৰাম পাহাড়ের মানুষ বেশি রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। সেই রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা না যায়। মানুষের মঙ্গলের জন্য বিশেষ দৈব তান্ত্রিক ক্রিয়ার মাধ্যমে এই পূজা প্রচলন শুরু হয়।
রাজমালা সূত্রে জানা যায় ” মহারাজা ত্রিলোচনের শাসনকালে গ্ৰামকে নিরাপদে রাখার জন্য ত্রিলোচনের স্ত্রী রাণী পদ্মাবতী প্রথম কের পূজার সূচনা করেন। “গ্ৰামের মানুষদের নিরাপদ রাখতে দেবতার পূজা অর্চনা করা রাজন্যবর্গ কতব্য মনে করতেন।
কের পূজার নিয়ম বিধি মধ্যে রয়েছে – পূজার সময় কের জন্য নির্দিষ্ট একটা এলাকা নির্ধারণ করা হয়। এই এলাকার মানুষ চলাচলের পথে বাঁশে তীরধনুক দিয়ে পথ অবরোধ করে রাখা হয়। একজন পথচারী এই নির্দশন থেকে সহজেই বুঝতে পারবেন এখানে কের পূজা চলতেছে। অবরোধ ভেঙ্গে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। সেই রকম অবরোধ ভেঙ্গে কেউ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। যিনি নিয়ম ভঙ্গ করেন।তাকে শাস্তির কবলে পড়তে হয়। এছাড়া তাহল অমঙ্গলের চিহ্ন।
যার জন্য কের বেষ্টিত এলাকায় কোন মমুর্ষ রোগী বা প্রসূতি মা থেকে থাকে। তাদের কে কেরের সীমানার ভেতরে থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।
আগে আগরতলা শহরের বিশাল অংশ নিয়ে কেরের গন্ডি ছিল। জনগনের অসুবিধা হ ওয়াতে এখন কেরের গন্ডি কমিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
পূজার সময় কের পূজো লোক চক্ষুর অন্তরালে খুবই গোপনীয় ভাবে করা হয়।তার মাধ্যমে সৃষ্টি র পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।তখন কোন শব্দ ছিল না।ছিল না আলো।
আরো করা হয় ভোমরা পোকার শব্দ সৃষ্টি বাঁশের যন্ত্র দিয়ে। সেই টি পুজোর সময় বাজানো মানে ঘোরানো হয়।একটি ছোট বাঁশের খন্ড একদিকে দুইটা ছিদ্র করা হয় । ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে একটা দড়ি ঢুকিয়ে সেটাকে বেঁধে দড়িতে ধরে বাঁশের টুকরো ঘুরানো হয়। সেই টি তখন ঘুড়তে থাকে তখন ভোমরা পোকার শব্দ সৃষ্টি হয়।তার মাধ্যমে মানুষ কে বুঝিয়ে দেয়া হয় যে নতুনের সৃষ্টি হচ্ছে।
এই সময় “নাগরাই ” পুজো করা হয়।তা হল বাঁশের সাথে বাঁশের ঘর্ষণ সৃষ্টি করে আগুনের সূত্রপাত ঘটানো হয়। তার মাধ্যমে কের পূজার সমাপ্তি ঘটে।
পূজার শেষে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন। সেই সময় পূজার শান্তির জল মানুষ সংগ্ৰহ করেন।
পূজা শেষে কালি পূজা, গঙ্গা পূজা করতে হয়। তখন পাঠা ,মোরগ বলি দেয়ার বিধান রয়েছে। পূজা শুরুতে এবং শেষে তোপধ্বনির মাধ্যমে জনগণ কে কের পূজার বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়।
আজকের কের পূজার পর থেকে চৈত্রের শেষ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন জনজাতিদের পাড়ায় পাড়ায় তাদের নিজেদের সুবিধা মত কের পূজো করা হবে। গ্ৰামের এবং দেশের জনগণের মঙ্গলার্থে এই পূজো প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।