বিধানসভা নির্বাচনে তিপরা মথা এককভাবে নির্বাচনে লড়বে : সেমিফাইনাল ভিলেজ কমিটি নির্বাচন

হাবেলী প্রতিবেদন। আগরতলা। ২৪ জুলাই।।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তিপরা মথা দল একক ভাবে লড়াই করবে। ৩৫ টি বিধানসভা আসনে তিপরা মথা দল প্রার্থী দাঁড় করাবে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে দল সাংগঠনিক কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠন কে শক্তিশালী করতে নারী এবং যুবক যুবতী দের বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় মথা দল কে শক্তিশালী করতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

দলের সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর মানিক্য দেবর্বমা সমস্ত বিষয় নিজ হাতে সাজিয়ে তুলছেন।

আই এন পি টির অংশের যেসব নেতা মথা দলে যোগদান করেছেন। তাদের কে এক সময় কিছু টা দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। মহারাজা এখন অনুধাবন করতে পেরেছেন। এখন তিনি আই এন পি টির কর্মকর্তাদের সাংগঠনিক কাজে বেশি যুক্ত করছেন।

ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের ক্ষমতায় আসার পর মহারাজা জমাতিয়া সমাজ থেকে তুলে এনে মুখ্যনির্বাহী সদস্য পদে বসিয়েছেন। সেখানে উপজাতি যুব সমিতি র আমলে এ ডি সি র চেয়ারম্যান পদে ছিলেন জগদীশ দেবর্বমা। দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি এডিসি সংসদীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেছেন। তিনি পরে আই এন পি টির হয়ে জনজাতিদের উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। বর্তমানে উনি তিপরা মথা দলে যোগদান করেন।এডিসি তে এখন চেয়ারম্যান পদে থেকে সংসদের কাজ কর্ম পরিচালনা করেছেন।

মহারাজা এ ডি সি প্রশাসনের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য মুখ্যনির্বাহী পদে পূর্ণচন্দ্র জমাতিয়াকে বসিয়েছেন। এখন ও এক বছর পূর্ণ হয় নি। ইতিমধ্যে মহারাজা অনুধাবন করতে পেরেছেন শ্রীজমাতিয়া সঠিক ভাবে প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারছেন না। তিনি বিষয়টি দলের অন্যান্য দের সাথে আলোচনা করেছেন বলে সংবাদ। এই পদে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জগদীশ দেবর্বমা কে দায়িত্ব দেয়া সঠিক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে র পর সি ই এম পদে পরিবর্তন করা হতেও পারে বলে সংবাদ। এখন তাদের কাছে একটাই লক্ষ্য বিধানসভা নির্বাচন।এই নির্বাচনে দল একটি নির্নায়ক ভূমিকা গ্ৰহন করতে চায়।

ভিলেজ কমিটি নির্বাচন নভেম্বর মধ্যে সম্পন্ন করতে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশন কে।

৫৮৭ টি ভিলেজ কমিটির মধ্যে নির্বাচন হবে।তিপরা মথা দল এককভাবে ৫০০ অধিক ভিলেজ কমিটি নিজেদের দখলে যেভাবে হোক দখলে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাবে। সেই দিশাকে সামনে রেখে মথা কাজ করা শুরু করেছে ।

ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের ১০টি আসন মথার হাত ছাড়া হয়েছিল। সেই সব আসনের ভিলেজ কমিটি গুলো দখলে নিয়ে আসা প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া ১৮ টি আসনে তিপরা মথা দল দখল করে ছিল। সেই সব আসনের একটি ভিলেজ কমিটি ও যাহাতে অন্য দখল করতে না পারে সে দিকে নজর রেখে কাজ করছে।

এ ডি সি তে ক্ষমতায় আসার পরপরই মথা বিভিন্ন দপ্তরে শুন্যপদ পূরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিক্ষিত বেকার দের চাকরি প্রদানের লক্ষ্যে আবেদন পত্র জমা রাখা হয়েছে। আবেদন পত্র জমা রাখার কিছু দিন পর থেকে চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।প্রথম পর্যায়ের আবেদন কারী দের ইন্টারভিউ শেষ হয়।তার কিছু দিন পর যোগ্যদের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। ভিলেজ কমিটি নির্বাচনের আগে আরও কিছু শূন্য পদে শীঘ্রই নিয়োগ করা হবে বলে সংবাদ। এছাড়া নভেম্বরে খুমুলুঙ্ এ সেনাবাহিনীর বিশেষ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সংবাদ।

মহারাজা এ ডি সি তে ক্ষমতায় আসার পর জনজাতি যুবক যুবতী দের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে আসছে।নব প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখন মথা দলের প্রতি বেশি আগ্রহী।

এ ডি সি ২০১৮ সালে আই পি এফ টি এবং বি জে পি সংগঠন শক্তিশালী ছিল। এখন পাহাড়ে বসবাস কারি জনজাতিদের মধ্যে আই পি এফ টির সর্মথন শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

বি জে পি ক্ষমতায় আসার পর পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি মজবুত রয়েছে।এক সময় বি জে পি কে শক্তিশালী করতে জনজাতি নেতা গন কাজ করে ছিল। এদের বিশাল অংশের নেতা নেত্রী বি জে পি ছেড়ে তিপরা মথা দলে যোগদান করেছেন।তাতে তিপরা মথা দল শক্তিশালী হয়েছে।বি জে পি রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে। সাড়ে চার বছর পর এ ডি সি তে ভিলেজ কমিটি নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করতে পারবে না । একথা এখন কেউ বিশ্বাস করবে না। অনেক ভিলেজ কমিটি নির্বাচনে বি জে পি নয় শুধু অন্যান্য দল প্রার্থী দাঁড় করাতে পারবে না বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।কারণ সমতলে বি জে পি যে পদ্ধতি অবলম্বন করে পঞ্চায়েত,পুরপরিষদ, বিধানসভা উপনির্বাচন সংগঠিত করেছে।বি জে পি শেখানো পথে তিপরা মথা দল ভিলেজ কমিটি নির্বাচনে লড়াই করবে বলে অনেকের ধারণা।

যদিও ভিলেজ কমিটি নির্বাচন রাজ্য সরকারের মাধ্যমে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরের তত্ত্বাবধানে রাজ্য নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করবে।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে রাজ্যসরকার পরিচালিত আরক্ষা প্রশাসন এবং টি এস আর বাহিনী কর্মীগন।

আই পি এফ টি এবং বি জে পি জোট রাজ্যের আসার পর

বামফ্রন্ট পরিচালিত নির্বাচিত ভিলেজ কমিটি গুলো সদস্যদের জোর জুলুম করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই সব শূন্য পদে এ ডি সি তে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময়ে ভিলেজ কমিটি র এক হাজার ওয়ার্ড নির্বাচন করাতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। রাজ্য সরকার সাড়ে চার বছরে শূন্য পদে নির্বাচন করানোর প্রয়োজন মনে করেনি।তিপরা মথা দল এ ডি সি তে ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত ভিলেজ কমিটি পরিচালনা করতেন বি জে পি এবং আই পি এফ টি মনোনীত সদস্য গন। যখন মথা দল ক্ষমতায় আসে ।তখন এক ই পদ্ধতি অবলম্বন করে সব ভিলেজ কমিটি দায়িত্ব জবর দখল করে নেয় । ফলে ভিলেজ কমিটি পরিচালনা দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।রাজ্য সরকার ব্লকের মাধ্যমে বি জে পি এবং আই পি এফ টি মনোনীত কমিটি দিয়ে উন্নয়ন কাজ কর্ম পরিচালনা করতে থাকে।

অন্যদিকে মথা তাদের মনোনীত সদস্য দের মাধ্যমে ভিলেজ কমিটি এলাকা র উন্নয়ন কাজ কর্ম পরিচালনা করতে থাকে। নির্বাচিত কমিটি না থাকায় পঞ্চদশ অর্থ কমিশন এ ডি সির ভিলেজ কমিটি এলাকা উন্নয়নের কোন অর্থ বরাদ্দ দিতে রাজি নয়। অন্যান্য খাতের অর্থ ভিলেজ কমিটি কে দেয়া হয়। ভিলেজ কমিটি সচিবের নামে ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ টাকা দেয়া হয়। নির্বাচিত কমিটি না থাকায় জয়েন্ট একাউন্টে টাকা জমা দেওয়া হয় না। যেহেতু সচিবের নামে ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ টাকা জমা করা হয়। তিনি মনোনীত সদস্য দের পাত্তা দিতে রাজি নয়। তারপর ও মনোনীত চেয়ারম্যান গন উন্নয়ন অর্থ নামে বেনামে তুলে নিয়ে হাফিজ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এ ডি সি তে অবস্থিত ব্লক অফিসার গন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে রাজি নয়।দেখা যায় গত চার বছরে এ ডি সিতে অবস্থিত বিভিন্ন ব্লকের ব্লক অফিসার গন বারবার বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যেতে চান।তাতে করে উন্নয়নমূলক কাজ কর্ম মুখ থুবড়ে পড়ে।

এ ডি সি এলাকায় ভিলেজ কমিটি পরিচালিত উন্নয়ন কাজ কর্ম বলতে গেলে কিছুই হয় নি। গন্ডাছড়া থেকে সিমনা, কাঞ্চনপুর থেকে সাব্রুম পয্যন্ত এ ডি সি এলাকায় গত চার বছরে পাকা , কাঁচা রাস্তা সংস্কার করা হয় নি।শুখা মরসুমে চলছে পানীয় জলের তীব্রতর সংকট।জলসেচের অভাবে চাষের জমি ফেটে চৌচির। জলের অভাবে জমি চাষ করা যাচ্ছে না। স্কুলে শিক্ষক সংকট। পাহাড়ে বসবাস কারি জনজাতি ছেলে মেয়ে এখন শহরের স্কুলে এসে ভিড় করছে।শিক্ষক সংকট কারনে স্কুলে সঠিক ভাবে পড়াশোনা হয় না বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। কিন্তু সেই সব স্বাস্থ্য কেন্দ্র আজো চালু করা হয় নি। রোগে আক্রান্ত হয়ে জনজাতিদের ছুটে আসতে হয় শহরে।

রাজ্য সরকার ১২টি ব্লক এলাকায় জনজাতিদের মধ্যে বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করে যাচ্ছে।তার কারনে খাদ্য সংকট নেই। কিন্তু রেগা সহ বন, কৃষি, মৎস্য দপ্তর থেকে আশানুরূপ কাজকর্ম না হ ওয়ায় জনজাতি পরিবারের হাতে নগদ অর্থ অভাব।তাই এতসব সমস্যাকে সাথে নিয়ে তিপরা মথা, বি জে পি, কংগ্রেস , তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট ভিলেজ কমিটি নির্বাচন লড়তে যে তে হবে।

মিজোরাম থেকে আগত রিয়াং শরনার্থীদেরকে এ ডি সিতে বিভিন্ন জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।এরা এবার এ ডি সি তে প্রথম ভোটার।প্রথম ভোট ভিলেজ কমিটি নির্বাচনে দিবে। রিয়াং এবার অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর। এদের বেশির ভাগ ভোট মথা দলের পক্ষে যেতে পারে।

পাহাড়ে বামফ্রন্ট ভিলেজ কমিটি নির্বাচনে হারানো জমি ফেরত না পান।তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস পাহাড়ে তাদের খাতা খুলতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত থেকে রক্ষা করা দায় হয়ে পড়বে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে শাসক দল বি জে পি কে। এখন দেখার এই শাসকদল পাহাড়ে কত অংশ ভিলেজ কমিটি দখল করতে সক্ষম হয়।তার উপর নির্ভর করবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দল পাহাড়ে বি জে পি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না।

এখন দেখার কে শেষ হাসি হাসেন।সে দিকে নজর রাখতে হবে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।